সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
Logo কুতুবদিয়ায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন, আটক ১ Logo জিন্মিশালা থেকে আবারও উদ্ধার ১৯, পাচার চক্রের ৪ সদস্য আটক Logo বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ কিশোর, ১৭ ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার Logo কক্সবাজার বিমানবন্দর : আন্তর্জাতিক ঘোষণা স্থগিত, হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা Logo পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই অনিশ্চয়তার মেঘ সেন্টমার্টিনে Logo রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১ লাখ ১২ হাজার পিস ইয়াবাসহ নারী আটক Logo উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু Logo যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘শহীদ’ টেকনাফের দুই সহোদরের শাহাদাতবার্ষিকী পালন Logo পাচারের উদ্দেশ্য পাহাড়ে জিম্মি করে রাখা ৪৪ জনকে উদ্ধার Logo বিজিবি’র ‘ডগ মেঘলার’ সহায়তায় চোলাই মদসহ আটক ২

পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই অনিশ্চয়তার মেঘ সেন্টমার্টিনে

জসিম মাহমুদ
আপডেট রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

তিন বছর আগেও টেকনাফ থেকে অনেক জাহাজ দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে যেত। তাতে পর্যটকদের সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হত। কিন্তু মিয়ানামারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র তৎপরতার কারণে ওই নৌপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন থেকেই টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।

এরপর সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজগুলো চলাচল শুরু করে কক্সবাজার থেকে। জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে এসব জাহাজ চলাচল করে। সকাল ৯টায় এসব জাহাজ সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করলে পৌঁছাতে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা সময় লেগে যায়। অর্থাৎ, যেতে যেতেই বিকাল গড়িয়ে যায়। কিন্তু সরকারি নির্দেশ হল, নভেম্বরে সেন্ট মার্টিনে গেলে দিনে দিনে ফিরে আসতে হবে। অর্থাৎ ৫টার মধ্যেও যদিও সেন্ট মার্টিন থেকে জাহাজ ছাড়ে, সেটা কক্সবাজারে পৌঁছাতে রাত ১২টা বাজবে। তার মানে, সেন্ট মার্টিনে গিয়ে একজন পর্যটক থাকতে পারবেন বড়জোর দুই ঘণ্টা।
তবে এই ‘দুই ঘণ্টা’ সময় নিয়েও আপত্তি আছে সেন্ট মার্টিন হোসাইন জুহুরা ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুর রহিম জিহাদীর।
তিনি বলছিলেন, ‘এখন তো জেটি ভাঙা। এই জেটি দিয়ে জাহাজ থেকে সেন্ট মার্টিনের মাটিতে নামতেই তো এক ঘণ্টা লেগে যাবে। তাহলে হাতে থাকল আর এক ঘণ্টা। এখন বলেন, ১৪-১৫ ঘণ্টা সমুদ্রে জার্নি করে এই এক ঘণ্টার জন্য কোন পর্যটক সেন্ট মার্টিন আসবে? আর কেনইবা আসবে? মানুষ নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘুরতে বের হয়। আর সেই সময় সেন্ট মার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করে রেখেছে সরকার।’

আব্দুর রহিম জিহাদীর ভাষ্য, ‘ডিসেম্বর- জানুয়ারিতে যারা আসবেন, তারা রাত্রিযাপন করতে পারবেন। তবে এবার তো ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আর রমজান আছে। ফলে তার আগে এই সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী থাকবে, মানুষ কতটা ঘুরতে আসবে, সেটা কিছুটা হলেও তো আন্দাজ করা যাচ্ছে। ভালো পর্যটক এবার আসবে না।’
রহিমের প্রশ্ন, ‘এই এক মাসের আয়-উপার্জন দিয়ে দ্বীপের মানুষ ১১ মাস কেমনে চলবে? হিসাবটা খুব কঠিন।’
জেটি সংস্কার শেষ হয়নি
সেন্ট মার্টিনের পর্যটকদের ওঠানামার একমাত্র জেটির সংস্কার কাজ এখনো শেষ হয়নি। পর্যটন মৌসুমের আগে জেটির সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না। জেটির সংস্কার শেষ না হলে পর্যটন মৌসুমে পর্যটকবাহী জাহাজ ভেড়ার স্থানও থাকবে না। বাধ্য হয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। এটি ‘ইচ্ছাকৃত’ কিনা তাও ভাবিয়ে তুলছে দ্বীপবাসীকে।
দ্বীপের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জেটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগে। ঢিলেঢালা ও দায়সারাভাবে চলছে কাজ। দ্রুত ও কম সময়ে জেটির সংস্কার শেষ হওয়ার লক্ষণ নেই। যদি মৌসুমের আগে সংস্কার শেষ না হয়, তাহলে ওই জেটি পরে সংস্কার করে কী ফায়দা?’
সেন্ট মার্টিন জেটি নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এস রহমান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রতিনিধি মো. আলী হায়দার বলেন, ‘নতুন জেটির জন্য সাত কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পাইলিং করে মোট ৭০টি পিলারের অনেকাংশের কাজ শেষ। এখন রেলিং ও সিঁড়িসহ অন্য অবকাঠামো কাজ চলে। বৈরী আবহাওয়ার জন্য কিছুটা সমস্যা হলেও কাজের গুণগত মান বজায় রেখে পর্যটন মৌসুম শুরুর আগে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘জেটি নির্মাণের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে, দ্রুত কাজ শেষ হবে বলে তারা জানিয়েছেন।’
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বললেন, নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে সেন্টমার্টিন এ পর্যটক যাওয়া শুরু হবে। সেন্ট মার্টিনের পর্যটন বিষয়ে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে ১২টি নির্দেশনা দিয়েছেন। এ নির্দেশনা গুলো মেনে পর্যটক যাওয়া শুরু হবে সেন্টমার্টিনে।
সরকারের নির্দেশনা
সেন্ট মার্টিনের পর্যটন বিষয়ে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে ১২টি নির্দেশনা রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (১৯৯৫ সনের ১ নম্বর আইন) এর ধারা ১৩ অনুযায়ী প্রণীত ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২৩’ (এসআরও নং-১৬৫-আইন/২০২৩, তারিখ: ২৩ মে ২০২৩) এর আলোকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এতে অনেক বিষয়ের মধ্যে বলা হয়েছে, দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
• নভেম্বর মাসে পর্যটকরা শুধু দিনের বেলা দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না।
• ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
• বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না।
• পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকেট কিনতে হবে, যেখানে প্রতিটি টিকেটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকেট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
• সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ।
• কেয়া বনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
• এ ছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সিবাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
• নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
• পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
‘২০০ পরিবার দ্বীপ ছেড়েছে’
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেন্ট মার্টিন নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয় নানা বিধি-নিষেধ দিয়েছে। যার জেরে ‘চরম দুর্দিন’ যাচ্ছে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দাদের।
বঙ্গোপসাগরের কোলের এই দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ৭০ শতাংশই গত প্রায় আড়াই দশকে পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন। আর বাকি প্রায় এক হাজার ৬০০ জেলে পরিবারের সদস্যদের একমাত্র অবলম্বন ‘দরিয়া’। দুই পেশার মানুষই এখন সংকটে।
পর্যটক ভ্রমণে সরকারের কড়াকাড়ি আরোপের কারণে গত মৌসুমে আশানুরূপ পর্যটক পায়নি সেন্ট মার্টিন। তাতে দ্বীপের পর্যটন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন।
দ্বীপবাসী ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণভাবে নিধিনিষেধের প্রতিবাদ জানিয়ে এলেও সরকারের সিদ্ধান্তই অটল থাকে শেষমেষ।
দ্বীপের পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটকদের আশায় তারা গত কয়েক বছরে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পর্যটন সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তারা। অনেকে হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁ লিজ নিয়েছেন। গত মৌসুমে (২০২৪ সাল) তাদের বিনিয়োগের অর্থের কিয়দাংশও উঠে আসেনি। এবার অবস্থা আরও শোচনীয় হবে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের টালবাহানা। গত বছর হঠাৎ করে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ভোগান্তিতে পড়ে দ্বীপের মানুষ। তারা কর্মহীন হয়ে পড়ে।’
ইউপি সদস্য বলেন, ‘কমপক্ষে ২০০ পরিবার কর্মসংস্থানের জন্য দ্বীপ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। সেন্টমার্টিনের অনেক মানুষ টেকনাফ ও কক্সবাজারে ইজিবাইক, অটোরিকশা, ভ্যান চলিয়ে ও দিনমজুরি করে পরিবার চালাচ্ছে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, সেন্ট মার্টিনের মানুষকে এই দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচানোর জন্য।’
সেন্ট মার্টিনের হামিদ হোসেন এখন পরিবার নিয়ে টেকনাফে বসবাস করেন। তিনি টেকনাফে অটোরিকশা চালান, পাশাপাশি অটো স্ট্যান্ডের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করেন।
তিনি বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। বউ-বাচ্চা নিয়ে অনাহারে থাকতে হত। তাই জীবন বাঁচাতে টেকনাফে পালিয়ে এলাম। এখানে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি আমি। আমার মত অনেক পরিবার সেন্ট মার্টিন থেকে চলে এসেছে।’
হামিদ বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনে এখন দিনমজুর কেউ নেয় না। একটা স্বপ্ন ছিল ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাব, সেই স্বপ্ন শেষ। সরকারের বিকল্প কর্মসংস্থানের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে পালিয়ে চলে আসতে হল।’
সরকারের পক্ষ থেকে সেন্ট মার্টিনের মানুষদের জন্য বিকল্প যে কর্মসংস্থানের কথা বলা হচ্ছিল তারও কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করলেন স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী হাফেজ আবুল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় কেউ কেউ স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। কেউ কেউ কাজের খোঁজে দ্বীপ ছেড়ে গেছে।’
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটন মৌসুম নিয়ে যে নিয়ম-নীতি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে সেন্ট মার্টিনে দুর্ভিক্ষ শুরু হবে। সেন্ট মার্টিনকে নিয়ে যে গল্প শোনানো হয়, কাজের বেলায় কিছু হয় না। সরকার সেন্ট মার্টিনের মানুষদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ঘোষণা করল, এই পযন্ত কোনো কিছু বাস্তবায়ন হয়নি।’
ব্যস্ততা নেই রিসোর্টে
নভেম্বর থেকে মৌসুম শুরু হলেও অক্টোবরেই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় সেন্ট মার্টিনের হোটেল আর রিসোর্টে। পর্যটকদের জন্য হোটেলগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে সংস্কার, রঙ করাসহ নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করত কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এবার আর সেই ব্যস্ততা চোখে পড়ছে না।
সেন্ট মার্টিন রিসোর্ট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর এ সময়টা আমাদের নানান ব্যস্ততার মধ্যে যায়। হোটেল-রিসোর্ট সংস্কার, রঙ করা ও নানান প্রস্তুতিতে উৎসবের আমেজ থাকত। এবার সেটা নেই। অনিশ্চয়তা জেঁকে বসেছে সবার মাঝে। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে হোটেল-রিসোর্টগুলো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, প্রথম তিন মাস রাত্রিযাপনের সুযোগ দেওয়া হোক। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এখনো সরকারের সিদ্ধান্ত পুণর্বিবেচনার দিকে চেয়ে আছেন। আমাদের ধারণা, সরকার ব্যবসায়ী ও দ্বীপবাসীর রুজি-রোজগারের কথা বিবেচনা করে দ্বীপে পর্যটক থাকা ও যাতায়তের সিদ্ধান্ত শিথিল করবে।’
সেটা না হলে পর্যটন ব্যবসায়ী ও দ্বীপবাসীকে আসন্ন পর্যটন মৌসুমও হতাশায় কাটাতে হবে বলে মনে করছেন আবদুর রহমান।
রিসোর্ট বিক্রির চিন্তা
সেন্ট মার্টিন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবুল হোসেন চাকরির পাশাপাশি নিজের আয় বাড়ানোর জন্য ২০১৭ সালে ২০ শতক জমিতে ‘দ্বীপ কুটির’ নামে একটি রিসোর্ট গড়ে তোলেন।
তিনি খতিবের কাজের পাশাপাশি একটি মাদ্রাসায়ও শিক্ষকতা করেন। দুই প্রতিষ্ঠান চাকরির পাশাপাশি রিসোর্ট থেকে প্রতি বছর যা আয় হত, তা দিয়ে পাঁচ ছেলেমেয়েসহ সাতজনের সংসার চালাতেন।
আবুল হোসেন বলেন, ‘গত বছর সেন্ট মার্টিনে পর্যটক সীমিত করার পর থেকে বিপাকে পড়েছি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দ্বীপে কোনো আয়ের উৎস নেই আর। এখন আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। এভাবে চলতে পারে না। তাই রিসোর্ট বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ বংশ পরম্পরায় জেলে। সমুদ্রে মাছ ধরাই তাদের জীবিকা। জীবন-মৃত্যুর পরোয়া না করে বাঁচার তাগিদে তাদের ‘দরিয়ায়’ যেতে হয়।
কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা আর আরাকান আর্মির ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এখন সাগরে নামা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে জেলেদের।
গত কয়েক মাস ধরে গভীর সাগর থেকে ফিরে আসা জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। তাদের কেউ কেউ ফিরলেও অনেকে এখনও আরাকান আর্মির কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। ফলে সেন্ট মার্টিনের জেলেরাও ভালো নেই।
সেন্ট মার্টিন ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজিম বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ৯৫ ভাগ মানুষ পর্যটন শিল্প ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন একদিকে পর্যটকরা আসতে পারছেন না আর অন্যদিকে সাগরে মাছ শিকারে যেতে পারছে না আরাকান আর্মির ভয়ে। আমরা আদিকাল থেকে সেন্ট মার্টিনের আশপাশের সাগরে যেখানে মাছ শিকার করতাম ওখানে গেলে আরাকান আর্মি স্পিডবোট নিয়ে এসে ট্রলারসহ ধরে নিয়ে যায়। সাগরে অনেক জেলে মাছ শিকারে যেতে ভয় পাচ্ছে। এ নিয়ে জেলেদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
বেড়িবাঁধ চান দ্বীপবাসী
সাগরের বুকে একখণ্ড দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। অতীতে ঘূর্ণিঝড়, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে দ্বীপে কখনো পানি ঢুকে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত কয়েক বছরে বেড়িবাঁধবিহীন অরক্ষিত দ্বীপে জোয়ারের পানি ঢুকছে। মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে অনেক বেশি। তাই দ্বীপবাসী দ্বীপের চারিদিকে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে।
সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘দ্বীপের চারদিকে সাগর। আগে কখনও পানি ঢুকতে দেখিনি। কিন্তু গত দুই তিন বছর থেকে বর্ষা মৌসুম ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে দ্বীপের প্রবেশ করে মানুষের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে যায়। এটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অনেক বেশি পীড়া দিচ্ছে। দ্বীপ রক্ষায় একটি বেড়িবাঁধ আমাদের প্রাণের দাবি থাকবে সরকারের কাছে।’
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সেন্ট মার্টিনের ৫৯০ হেক্টর এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছে। সেন্ট মার্টিনে পরিবেশগত কারণে অনেক বাধা রয়েছে। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে যদি তারা চায় কাজ করা যেতে পারে। তবে বেড়িবাঁধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫