বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩২ অপরাহ্ন

সীমান্তে নজরবিহীন নজরদারি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:০৩ অপরাহ্ন

মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে মাদক, অস্ত্র ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নজিরবিহীন নজরদারি চালাচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্ত সুরক্ষায় যুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সার্ভেলেন্স রাডার, ড্রোন ও থার্মাল ক্যামেরা। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চল, রাতের অন্ধকার কিংবা বৈরী আবহাওয়াতেও নজরদারি চালানো সম্ভব হচ্ছে।

সার্ভেলেন্স রাডারের নজরদারি
টেকনাফের নাফ নদীর জেটি ঘাটে বসানো হয়েছে সার্ভেলেন্স রাডার। এটি ৫ কিলোমিটার এলাকায় বস্তুর অবস্থান, গতি ও উপস্থিতি সহজেই শনাক্ত করতে সক্ষম। শুধু জেটি ঘাটেই নয়, নাফ নদীর ৩৩ কিলোমিটার এবং শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন সাগর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকা নজরদারির জন্য বসানো হয়েছে ৬টি সার্ভেলেন্স রাডার। বিজিবির দাবি, এর ফলে সীমান্তে চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ এখন প্রায় অসম্ভব।

টেকনাফস্থ ২ বিজিবি’র সার্ভেলেন্স রাডার অপারেটর মোঃ আজিজুল হক বলেন, এই রাডার সর্বোচ্চ ৯৬ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত কাজ করে। ১ নটিক্যাল মাইল সমান ১ কিলো ৮০০ মিটার। নাফ নদী ছোট হওয়ায় অপারেশন পরিচালনায় ৩ নটিক্যাল মাইলে কাজ করি। অর্থাৎ ৫ কিলোমিটার এলাকায় কাজ করি। ৫ কিলোমিটার এলাকায় অপারেশন কার্যক্রম করতে সুবিধা হয়। প্রত্যেকটা নৌকা ধরতে পারি। একটা নৌকা যখন মিয়ানমার থেকে বের হয় আমরা তার অবস্থান সহজেই জানতে পারি এবং বিজিবির টহল টিমকে বলার পর তারা সহজে তাদের ধরতে পারে। যে কারণে কোন রোহিঙ্গা বা মাদক পাচারকারি টেকনাফ এলাকায় প্রবেশ করতে পারছে না।

ড্রোন ও থার্মাল ক্যামেরায় নজরদারি
“শুধু রাডার নয়, সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবিতে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ও থার্মাল ক্যামেরা। ড্রোনের মাধ্যমে দুর্গম এলাকা যেমন সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, ঠিক তেমনি থার্মাল ক্যামেরায় অন্ধকার রাত কিংবা বৈরী আবহাওয়াতেও ২ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত শনাক্ত হচ্ছে যে কোনো বস্তুর অবস্থান, গতি এবং উপস্থিতি। ফলে সহজেই অভিযান চালিয়ে ধরা হচ্ছে মাদকদ্রব্য ইয়াবা চালান কিংবা চোরাকারবারিদের।”
টেকনাফস্থ ২ বিজিবি’র ড্রোন অপারেটর আলহাজ হোসেন বলেন, সীমান্তে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে যখন রোহিঙ্গা, মাদক পাচারকারি বা যাই আসুক না কেন তা ড্রোনের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেকোন সময় নৌকা করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে তখন ড্রোনের সাহায্যে শনাক্ত করে খুব সহজেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা হয়। এই সীমান্তে প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা পাচার হয়, এই পাচারকারিদেরও ড্রোনের সাহায্যে শনাক্ত করে আটক করা হয়। এছাড়াও জালিয়াদ্বীপ নামক একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে সহজে যাওয়া যায় না। সেখানে ড্রোন পাঠিয়ে পর্যবেক্ষণ করাও হয়।
টেকনাফস্থ ২ বিজিবি’র থার্মাল অপারেটর নায়েক মাহাবুব আলম বলেন, টেকনাফ বিজিবিতে একমাসে সংযুক্ত হয়েছে থার্মাল ক্যামেরা। এই ক্যামেরার মাধ্যমে রাত্রিকালিন অন্ধকার সময়ে অথবা ঝড়-বৃষ্টি, দুর্যোগ মুহুর্তে নদী, সাগর ও স্থলভাগে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। মানুষ, নৌকা বা যে কোন বস্তুর অবস্থান স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। মিয়ানমার থেকে কোন নৌকা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে অথবা কোন লোক সাঁতার কেটে প্রবেশ করলেই খুবই সহজে শনাক্ত করা যায়। এক্ষেত্রে চোরাকারবারি ও মাদকদ্রব্য ধরতে সক্ষম হয়।

উদ্ধার ও জব্দ অভিযানের পরিসংখ্যান
বিজিবি জানায়, “গত ১৫ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই দুই মাসে ২৮ লাখের বেশী ইয়াবা, প্রায় এক কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ ৮৮ কোটি টাকার বেশি মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময়ে সীমান্ত দিয়ে আসা ২২টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। আর গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত আরাকান আর্মি সাগর থেকে ২২৮ জন জেলেকে ধরে যায়। এর মধ্যে বিজিবির প্রচেষ্টায় ১২৪ জনকে ফেরত আনা হয়েছে। এখনও ১২টি ট্রলারসহ ১০৪ জন জেলে আরাকান আর্মির হাতে আটক রয়েছে। যার মধ্যে ৯৫ জন বাংলাদেশী এবং ১৩৩ জন রোহিঙ্গা।”

নাফ নদী বা বঙ্গোপসাগর থেকে ট্রলারসহ জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। শতাধিকের বেশি জেলে এখনো রয়েছে আরাকান আর্মির হেফাজতে। প্রতিদিনই ঢুকছে মাদকসহ নিষিদ্ধ দ্রব্য। আর শঙ্কা তৈরি হয়েছে অস্ত্র প্রবেশের। তবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার আর বিজিবির কঠোর নজরদারির কারণে সীমান্তে সক্ষমতা বেড়েছে দাবি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির।
গভীর সাগরে সন্দেহভাজন নৌযানের গতিবিধি
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, সীমান্তে মোতায়েন করা জনবলের সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তি সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। যার ফলে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে নাফ নদীতে যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি তা স্থিতিশীল এবং গত কয়েক মাস ধরে বিবৃতকর কোন ঘটনা ঘটেনি।

লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “খুব উদ্বেগের সঙ্গে সম্প্রতি লক্ষ্য করেছি, গভীর সাগর এবং সেন্টমার্টিনের অদূরে জলসীমা রয়েছে। এই জলসীমা অতিক্রম করে পাশর্^বর্তী রাষ্ট্রে আমাদের এখান থেকে অহরহ কিছু সন্দেহজনক নৌযানের গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির নজরদারি সেন্টমার্টিন ছাড়িয়ে যতটুকু জলসীমা রয়েছে ততটুকু বিস্তৃত করা হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। যা আমরা আন্ত:বাহিনী সমন্বয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে নিয়মিত তথ্য দিয়ে যাচ্ছি। যে জায়গা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বা নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, এটা আমরা খতিয়ে দেখছি। আশা করি বিজিবির দেয়ার তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে সমন্বয় করে বাহিনীগুলো আরও কার্যকরিভাবে গভীর সাগর নিরাপদ রাখতে সক্ষম হব।”

চ্যালেঞ্জ ও সফলতা
লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “ভূ-প্রাকৃতিকভাবে এই সীমান্ত অত্যন্ত দুর্গম। এখানে যে কোন নিরাপত্তা বাহিনী বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর অর্পিত দায়িত্ব করতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাতের অন্ধকার ও চরম প্রতিকূল আবহাওয়াকে মানিয়ে নিতে হয়। টেকনাফ অঞ্চল অপরাধপ্রবন এলাকা। যেখানে অপরাধের বহুমাত্রিক রূপ দেখা যায়। তাই প্রতি বিষয় আলাদা আলাদাভাবে নিয়ে বিজিবিকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রযুক্তির সক্ষমতার কারণে নাফ নদীতে আমরা দৃঢ়তা সঙ্গে বলতে পারি, যেকোন প্রকার অপরাধমূলক কর্মকান্ড দমনে বিজিবি শতভাগ সফল হবে। প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমরা এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।”
সীমান্ত সুরক্ষায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে দায়িত্ব পালন করছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র ৩টি ব্যাটালিয়ন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫