অবশেষে বাতিল করা হয়েছে দলিল নিবন্ধনে বর্ধিত অতিরিক্ত উৎসকর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (আয়কর) গত ২৪ জুন একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এলাকায় এবং জেলা সদরে অবস্থিত সকল পৌরসভার অন্তর্গত কক্সবাজার জেলায় ১৮৮ মৌজার মধ্যে ৮১টি মৌজার সংশ্লিষ্ট দাগাদীর উপর নাল জমিতে প্রতি শতকে (৩ কড়ায়) ২৫ হাজার, বাড়ী শ্রেণী অর্থাৎ আবাসিক হলে প্রতি শতকে ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে পরিপত্র জারি করে। অবশেষে তা বাতিল করে গেজেট সংশোধন করেছে।
গতকাল সোমবার ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য এ.কে.এম বদিউল আলম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এদিকে অতিরিক্ত উৎস করের ফলে অযৌক্তিক আর্থিক চাপ, দলিল নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ, পেশাজীবীদের সংকট সহ নানান সমস্যায় জর্জরিত জেলার সাধারণ মানুষ জমি ক্রয়-বিক্রয়ে একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছিল। জমি হস্তান্তরে বর্ধিত অতিরিক্ত উৎসকরের বোঝা ছাপিয়ে দেওয়ায় এক প্রকার সর্বনিম্ন নিবন্ধন প্রক্রিয়া। একদিকে জমি হস্তান্তরে অতিরিক্ত উৎস কর অন্যদিকে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে জমি হস্তান্তরের অনুমতি নেয়া জেলাবাসীকে বিষিয়ে তুলেছে বলে দাবি করে মানববন্ধন সহ বিভিন্নভাবে তা বাতিল করার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
জেলা রেজিস্ট্র্রী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর অন্তর্গত মৌজা সমূহের দলিল নিবন্ধনে উৎসে কর আদায়ের ক্ষেত্রে স্পষ্টীকরণ অর্থাৎ পুনর্বিবেচনা করার জন্য গত ১৩ আগস্ট মহা-পরিদর্শক (নিবন্ধন) এর বরাবরে আবেদন জানান জেলা রেজিস্ট্রার। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে মহা-পরিদর্শক (নিবন্ধন) গত ২০ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবরে বর্ধিত অতিরিক্ত উৎসকর আদায়ের স্পষ্টকরণ ও পুনর্বিবেচনার দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
জানা গেছে, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর অন্তর্গত মৌজা সমূহের দলিল নিবন্ধনে উৎসে কর আদায়ের ক্ষেত্রে উৎসে কর বিধিমালা-২০২৩ (সংশোধিত ২৪ জুন, ২০২৫ এস আর ও নং-২৬৯/আইন/আয়কর-১৪/২০২৫) সারণী-১ এর ৭ নং ক্রমিকে বর্ণিত “অন্য কোন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ” এর অন্তর্গত সকল মৌজার ‘ক’ হতে ‘চ’ শ্রেণি ভুক্ত এলাকার জন্য যথাক্রমে শতক প্রতি সর্বোচ্চ ১ লক্ষ এবং সর্বনিম্ন ২৫ হাজার উৎসে কর আদায়ের হার প্রযোজ্য হয়। ওই অনুসারে কক্সবাজার জেলায় “কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ” প্রতিষ্ঠিত থাকায় “অন্য কোন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ” হিসেবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) বিবেচিত হওয়ায় কক্সবাজার জেলার ৮১টি মৌজার উপর বর্ধিত ওই অতিরিক্ত উৎসকর প্রযোজ্য হয়।
জেলার সচেতন মহলের অনেকের দাবি, ২০২০ সনের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত গেজেটে সী বীচ এরিয়াসহ জেলাধীন সকল উপজেলার (৮টি উপজেলা) ১৮৮ টি মৌজার মধ্যে ৮১ টি মৌজার দাগওয়ারি ৬৯০.৬৭ বর্গ কিলোমিটার জমি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর পর্যটন শিল্প বিকাশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণে অধিক্ষেত্র হিসেবে ঘোষিত আছে। কিন্তু ওই দাগওয়ারি ৬৯০.৬৭ বর্গ কিলোমিটার জমির উপর করহার নির্ধারণ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ছিল।
এদিকে কর্তৃবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর অধিক্ষেত্রাধীন বিশাল এলাকার মৌজার দলিল নিবন্ধনে বর্ণিত হারে উৎসে কর গত ১ জুলাই হতে কার্যকর হওয়ায় তা অধিক এবং অবাস্তব হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল জেলাবাসী। তাই জেলার সচেতন মহল, ভুক্তভোগী ও জেলার সাধারণ মানুষের কাঁধে অতিরিক্ত করহার বর্ধিত করায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ সংক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কক্সবাজার জেলা রেজিস্ট্রারের সাথে সাক্ষাত করেন। বর্ধিত উৎসে করের হার অযৌক্তিক, অবাস্তব ও বেআইনি হিসেবে দাবি করে সংক্ষুব্ধ অনেকে আবেদন করে বর্ধিত করহার পুনর্বিবেচনার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে আবেদন করেন।
জেলা রেজিস্ট্রার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, উৎসে কর বিধিমালার বিধি এর উপবিধি ৮ এ ‘ক’ হতে ‘চ’ শ্রেণিভুক্ত এলাকা বুঝাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ক্ষেত্রে “নিয়ন্ত্রণাধীন” শব্দটি ব্যবহৃত হওয়ায় উক্ত কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন অঞ্চলের ক্ষেত্রে ওই উৎসকর প্রযোজ্য হয়েছে। কিন্তু অন্য কোন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অন্তর্গত সকল মৌজা” শব্দগুলি ব্যবহৃত হওয়ায় দীপাঞ্চল অর্থাৎ সোনাদিয়া, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী সহ এরূপ বিস্তৃত ও অনুন্নত অঞ্চলে এই করহার প্রযোজ্য হয়েছে। ফলে দলিল নিবন্ধনে স্থবিরতা ও রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ তুলনামূলক কম হয়েছে।
জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধিক্ষেত্রাধীন/অন্তর্গত মৌজাসমূহের দলিল নিবন্ধনে উৎসেকব আদায়ের ক্ষেত্রে স্পষ্টাকরণ/পুনর্বিবেচনার বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত প্রদানের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহা-পরিদর্শক (নিবন্ধন) এর বরাবরে জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করে জেলা রেজিস্ট্রার। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবরে বর্ধিত অতিরিক্ত উৎসকর আদায়ের স্পষ্টকরণ ও পুনর্বিবেচনার দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে বর্ধিত উৎসকরের আওতাভুক্ত এলাকা থেকে বাতিল করে গতকাল সোমবার ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য এ.কে.এম বদিউল আলম স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আবুল হোছাইন বলেন, বর্ধিত উৎসকর সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ছিল। দলিল নিবন্ধন সর্বনিম্ন ছিল গত কয়েকমাস। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায় স্থবিরতা নেমে এসেছিল। গত কয়েকমাসে বর্ধিত ওই উৎসকর বাতিল করার জন্য জেলার সাধারণ মানুষের পক্ষে আমরা মানববন্ধন, বিভিন্ন দফতরে আবেদনের মাধ্যমে অবগত করেছিলাম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে। অবশেষে তা বাতিল হওয়ায় জেলার সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বস্তিতে। এক্ষেত্রে জেলা রেজিস্ট্রার, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং সংবাদ প্রচারে দৈনিক কক্সবাজার অসামাস্য অবদান রেখেছে।
সূর্যোদয় :- ৫:১০ | সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯ |
নাম | সময় |
ফজর | ৪:১৫ |
যোহর | ১২:১০ |
আছর | ৪:৫০ |
মাগরিব | ৬:৪৫ |
এশা | ৮:১৫ |