মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
Logo কক্সবাজারে ৯ বছরেও শেষ হয়নি বেজার ট্যুরিজম পার্ক প্রকল্প Logo বাংলাদেশি নৌযান রহস্যজনকভাবে মিয়ানমারে প্রবেশ করছে Logo চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রাণ গেল বউ-শাশুড়িসহ একই পরিবারের ৩ জনের Logo ফিশিং ট্রলার থেকে লক্ষাধিক ইয়াবাসহ দুই কারবারি আটক Logo কক্সবাজারে ধর্ষণ থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ গেল স্বামীর Logo মেরিন ড্রাইভের শিশুপার্ক এলাকা থেকে ইয়াবাসহ খুরুশকুলের মোস্তাক আটক Logo পুকুরে ডুবে রামু কলেজের শিক্ষার্থী নিহত Logo বিকল ফিশিং বোটসহ ১৭ জেলেকে উদ্ধার করলো কোস্ট গার্ড Logo উখিয়ার সাংবাদিক আমিন হত্যা: ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা Logo ‘মাদকের টাকা না পেয়ে’ চাচার দা’য়ের কোপে প্রাণ গেল ৩ বছর বয়সী ভাতিজির

কক্সবাজারে ৯ বছরেও শেষ হয়নি বেজার ট্যুরিজম পার্ক প্রকল্প

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:১৮ অপরাহ্ন

দীর্ঘ ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও পরিকল্পিত ৩ পার্কের একটিও সেখানে চালু হয়নি। কবে প্রকল্পগুলো শেষ হবে সে নিয়েও সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।

দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে কক্সবাজারে প্রায় ১১,০০০ একর জমিতে ৩টি ট্যুরিজম পার্ক করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো পার্ক সেখানে চালু হয়নি। কবে প্রকল্পগুলো শেষ হবে সে নিয়েও সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।

প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী টেকনাফ ও মহেশখালী উপজেলার প্রায় ১১,০০০ একর জমিতে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক (৯৬৭ একর), নাফ ট্যুরিজম পার্ক (২৭১ একর) এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক (৯,৪৬৭ একর) নির্মাণের কথা ছিল।

তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক প্রকল্প বাতিল করেছে। এ জমির বন্দোবস্ত বেজার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বেজা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্যুরিজম পার্ক প্রকল্পগুলো তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই।

অন্যদিকে, নাফ ট্যুরিজম পার্কের জন্য (২৭১ একর) গত বছর বেজা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে ডেভেলপার খুঁজলেও কোনো প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখায়নি। কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীর মোহনায় জালিয়ার দ্বীপে এ পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল।

বেজার তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে নাফ ট্যুরিজম পার্কের মহাপরিকল্পনা অনুমোদন পায়। সেখানে হোটেল, ইকো কটেজ, কেবল কার, ঝুলন্ত সেতু ও ভাসমান জেটি নির্মাণের পাশাপাশি শিশুপার্ক, পানির নিচে রেস্তোরাঁ, ভাসমান রেস্তোরাঁসহ নানা পর্যটন স্থাপনার পরিকল্পনা রয়েছে।

জালিয়ার দ্বীপের এক পাশে মিয়ানমার, অন্য পাশে বাংলাদেশের নেটং পাহাড়। বেজার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “সীমান্তবর্তী অবস্থান এবং নিরাপত্তা বিবেচনায় ডেভেলপার আগ্রহী হচ্ছে না। পিপিপি মডেলে আহ্বান জানানো হলেও কোনো প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়নি।”

সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক প্রকল্পে ধীরগতি

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের কাজ তুলনামূলক এগিয়ে থাকলেও অবকাঠামো উন্নয়ন শেষ না হওয়ায় হোটেল-রিসোর্ট নির্মাণে গতি আসেনি। বেজার বর্তমান দুই বছরের অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকায়ও এ পার্ক নেই।

তবে আলাদা পরিকল্পনায় বেজা সাবরাং পার্ককে আগামী ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ২৮ বিনিয়োগকারীকে প্রায় ১১৯.৭৯ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে প্রায় ৪৬০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ।

ইফাদ গ্রুপ, ডিআইআরডি কম্পোজিট টেক্সটাইলস, পাঠওয়ারী এন্টারপ্রাইজ, ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, ডিপটা গার্মেন্টসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হোটেল নির্মাণের জন্য জমি নিয়েছে। তবে প্রতিনিধিদের দাবি, অবকাঠামো না থাকায় তারা কাজ শুরু করতে পারছেন না।

সম্প্রতি জলোচ্ছ্বাস ও বৈরী আবহাওয়ায় প্রকল্প এলাকার সুরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেজার এক কর্মকর্তা জানান, সাগরের ভাঙন ঠেকাতে টেকসই ব্যবস্থার জন্য নতুন করে বিশ্লেষণ চলছে এবং প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে। এরপর হোটেল নির্মাণে আগ্রহীদের জমি কার্যকরভাবে হস্তান্তর করা হবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, পার্কটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটন খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং প্রায় ৩৫,০০০ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এখানে পাঁচ তারকা হোটেল, ইকো-ট্যুরিজম, মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম, সি-ক্রুজ, বিদেশি পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা, সেন্টমার্টিন ভ্রমণের বিশেষ ব্যবস্থা, ভাসমান জেটি, শিশু পার্ক, ইকো-কটেজ, পানির নিচের রেস্টুরেন্ট, ভাসমান রেস্টুরেন্টসহ নানা বিনোদন সুবিধা তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাবরাং পার্ক রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করবে। বাঁধ নির্মাণ শেষ হলে পার্কের অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করবে বেজা।

অগ্রাধিকারের অভাব ও পলিসি ঘাটতি

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক পর্যটনের জন্য একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। তবে বর্তমানে আমরা পাঁচটি অগ্রাধিকারভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের কাজ করছি, যার মধ্যে সাবরাং অন্তর্ভুক্ত নয়।”

“সাবরাংয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে এবং এটিকে টেকসইভাবে উন্নয়ন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব দেওয়া পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ভালো অবস্থানে পৌঁছালে আমরা সাবরাংয়ের উন্নয়নে আরও গুরুত্ব দেব,” যোগ করেন তিনি।

চলতি বছরের শুরুতে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানের নেওয়া স্বল্পমেয়াদি অগ্রাধিকার পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী দুই বছরে যে পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হয়েছে সেগুলো হলো—চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এনএসইজেড), শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।

পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্তরা বলছেন, বাংলাদেশে পর্যটনের সাতটি প্রধান আকর্ষণ হলো—নদী, সাগর, পাহাড়, বন, ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, ঋতুচক্রের বৈচিত্র্য ও আতিথেয়তা। তবুও প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। দীর্ঘসূত্রতা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘাটতি এ খাতকে পিছিয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন বোর্ডের পরিচালক ও পত্রিকা পর্যটন বিচিত্রা–এর সম্পাদক মোহিউদ্দিন হেলাল বলেন, “আমাদের দেশে বিদেশি পর্যটক কম আসে। এ ধরনের এক্সক্লুসিভ পর্যটন পার্ক হলে বিদেশি পর্যটক বাড়বে।”

তিনি বলেন, “বেজার পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার খাতে বিবেচনা করা উচিত। কারণ যদি পাঁচ হাজার পর্যটক এই জোনে যায়, এর প্রভাব হবে অনেক বড়। এ ধরনের এক্সক্লুসিভ পার্ক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করতে পারব এবং দেশি পর্যটকরাও নতুন বিনোদনের জায়গা খুঁজে পাবেন।”

“পর্যটন যে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে, সেটা যতদিন নীতি-নির্ধারকদের বোঝানো না যাবে, ততদিন পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার পাবে না। অনেক দেশে পর্যটনকে উন্নয়নের প্রধান খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে তা নীতিগতভাবে যথাযথ গুরুত্ব পায়নি।”

“নীতি পর্যায়ে গুরুত্ব পেতে হলে আমাদের বুঝতে হবে—পর্যটন সরাসরি কী কী সুফল আনে, কমিউনিটিতে কী সুবিধা দেয় এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে এর ভূমিকা কতখানি। সঠিক ইমপ্যাক্ট অ্যানালাইসিস না হওয়া পর্যন্ত সরকারের পরিকল্পনাকারীরা এটি অনুধাবন করবেন না,” যোগ করেন মোহিউদ্দিন হেলাল।

সুত্র: টিবিএস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫