কক্সবাজারের প্রধান সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র ‘সদর হাসপাতালে’ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ঘিরে সক্রিয় দালাল চক্র। সহযোগিতায় জড়িত কিছু হাসপাতাল কর্মচারীও। কয়েকদিন ধরে ছদ্মবেশে হাসপাতালে নজরদারির পর বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) দুপুরে দালাল চক্রের ৪ সদস্যকে হাতেনাতে আটক করেছে র্যাব।
আটকরা হলেন মোঃ নুরু উদ্দিন (২৭), আবুল বাশার (৫১), বিপ্লব বড়ুয়া (৩০) ও পলাশ (৪২)।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কক্সবাজার ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল। জরুরি বিভাগে গড়ে ৫’শো এবং বর্হিবিভাগে দুই হাজারের বেশি রোগি সেবার জন্য আসে। আর ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও প্রতিদিন ভর্তি থাকে প্রায় ৯’শো মতো রোগী।
এই বিপুল সংখ্যক রোগীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সক্রিয় দালাল চক্র। অসহায়, তথ্যবিভ্রান্ত রোগী ও স্বজনদের টার্গেট করে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। তবে সাধারণ রোগী ও স্বজনদের দাবি, এই হাসপাতাল পুরোপুরি দালালমুক্ত করা হোক।
এদিকে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতালে ছদ্মবেশে নজরদারি শুরু করে র্যাব। আর গত দুইদিন ছদ্মবেশে থাকার পর বৃহস্পতিবার সকালে প্রমাণসহ হাতেনাতে দালাল চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করে র্যাব। দালাল চক্রের সদস্যদের আটকের ঘটনার পরপরই পুরো হাসপাতালের চিত্র অনেকটা পাল্টে যায়। পালিয়ে যায় দালাল চক্রের অনেক সদস্য। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে দেওয়া হয় কারাদণ্ড।
কক্সবাজারস্থ র্যাব ১৫ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর নাজমুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি পাসপোর্ট অফিস ও সদর হাসপাতাল এলাকায় সক্রিয় দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এই দালাল চক্র সহজ সরল মানুষকে নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এবং সরকারী সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় বাঁধা সৃষ্টি করছে। পাসপোর্ট করতে আসা আবেদনকারী এবং চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা রোগীদের কাছ থেকে এই চক্রগুলো অবৈধভাবে অর্থ আদায় করে আসছে। এতে একদিকে যেমন মানুষের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে হাসপাতালে নজরদারি বাড়ানো হয়। আর বৃহস্পতিবার সদর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে তথ্য-প্রমাণাদিও পাওয়া যায়।
র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসান বলেন, অপরাধীরা অপরাধ করেছে তা স্বীকার করেছে। তাই ৪ জনের মধ্যে দুইজনকে ৭ দিন, ১ জনকে ১৫ দিন ও বাকি ১ জনকে ২১ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। সাধারণ মানুষের হয়রানি ও দুর্ভোগ কমাতে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, দালাল চক্রের সাথে হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারীরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আরএমও সুবক্তাগীন মাহমুদ সোহেল বলেন, হাসপাতালের স্টাফরা যখন জড়িত থাকে তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এরই মধ্যে জড়িত থাকায় ২-১ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যখন আমরা যাকে ধরতে পারছি, ক্যামেরা মাধ্যমে বা অন্যভাবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে সেটা ১ হাজারের জন্য মধ্যে হয়তো ১ জন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কঠোর, এটা নিয়ে কমিটি রয়েছে। সুতরাং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। দালালদের বিরুদ্ধে সবসময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দুপুরের পর কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে হানা দেয় র্যাব। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। এসময় র্যাব-১৫ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর-মোঃ নাজমুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার দেবজিত পাল ও র্যাব ফোর্সেস এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসান পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের অভিযোগ গুলো শুনেন। তারা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন।
পরে র্যাব জানায়, জনগণের মৌলিক সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতে এসব দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক চক্রকে রুখে দাঁড়ানো অত্যাবশ্যক। এই লক্ষ্যে র্যাব-১৫ নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।
সূর্যোদয় :- ৫:১০ | সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯ |
নাম | সময় |
ফজর | ৪:১৫ |
যোহর | ১২:১০ |
আছর | ৪:৫০ |
মাগরিব | ৬:৪৫ |
এশা | ৮:১৫ |