মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০১ অপরাহ্ন

অপহরণ নাটক সাজিয়ে টেকনাফে সাংবাদিকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ

আব্দুর রহমান ইবনে আমিন, টেকনাফ
আপডেট বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ৯:১৪ অপরাহ্ন

টেকনাফে জমির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপহরণের নাটক সাজিয়ে সাংবাদিকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলার অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৭ মার্চ রাতে টেকনাফ পৌরসভার ডেইল পাড়ার বাসিন্দা মো. জয়নাল বাদি হয়ে থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

এই মিথ্যা মামলার দুই নম্বর আসামি করা হয় দৈনিক কক্সবাজার প্রতিদিন পত্রিকার  প্রতিনিধি মো. ফারুক বাবুলকে। তিনি ওই পত্রিকার টেকনাফ প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ অভিযোগ পর্যন্ত নেই। তার বিরুদ্ধে মামলা হাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠেছে।

মামলার বাদি জয়নাল টেকনাফ পৌরসভার ডেইল পাড়ার বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ আলী প্রকাশ কালা মোহাম্মদ আলির ছেলে। বিরোধী জমির মালিকানা দাবিকারী টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ডন আত্মসমর্পণকারী নুরুল আমিন। এছাড়া বাদীর আরেক ভাই আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ডন আবদুল আমিন। এদিকে আলোচিত টেকনাফের মাদক-হুন্ডির ডন মো. আমিনের ছোট ভাই জমির মালিক নুরুল আমিন। গেল বছরের (২০ মে) আবদুল আমিন সাত লাখ ইয়াবাসহ র‌্যাবের হাতে আটক হয়।

র‌্যাব জানিয়েছে, আটকদের মধ্যে আব্দুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি। তিনি গত ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রথম দফায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে সাজাভোগ শেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি ইয়াবার বড় একটি চক্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা রয়েছে।

এদিকে জমির নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, টেকনাফ মৌজার আরএস-২৬৭ খতিয়ানের মালিক আব্দুর জব্বার থেকে আয়ুব আলী ক্রয় করেন। এমআর রেকর্ডে ৪৫৬ নং খতিয়ান উক্ত আয়ুব আলির নামে রেকর্ড হয়। আয়ুব আলীর মৃত্যুতে তৎ স্বত্ব আবদুর রাজ্জাক পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হয়। তৎসময় বিএস জরিপে ১৪৬ নং খতিয়ান উক্ত আবদুর রেজ্জাকের নামে রেকর্ড চূড়ান্ত হয়। আবদুর রেজ্জাক থেকে বিগত ২২/৩/১৯৮২ ইংরেজি তারিখ কক্সবাজার এসআর অফিসের রেজিষ্টীকৃত ২৭৫০ নং কবলা মূলে ছলেমা খাতুন স্বামী মৃত মো. ইসমাইল মালিক হন। যাহা টেকনাফ সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে ৭৪২৬ নং সৃজিত খতিয়ান এবং ডিয়ারা জরিপের ১২৭৩ নং খতিয়ান উক্ত ছলেমা খাতুনের নামে রেকর্ড প্রচার হয়। এদিকে ছলেমা খাতুন থেকে বিগত ১৮/৩/২০১৫ ইং তারিখে টেকনাফ এসআর অফিসের রেজিস্ট্রিকৃত ৬১৭ নং হেবা দলিল মূলে কন্যা আনোয়ারা বেগম ২০ শতক প্রাপ্ত ও সত্ত্ব¡ দখলীয়। যা টেকনাফ সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে সৃজিত ৩৮৯১ দিয়ারা খতিয়ান আনোয়ারা বেগমের নামে প্রচার হয়। প্রকৃত পক্ষে আনোয়ারা বেগম গংয়ের বিশেষ টাকার প্রয়োজনে গত ১২/০৩/২৫ ইং তারিখে মৌলভি হাফেজ আহমেদ গংয়ের এর সাথে লিখিত বায়না চুক্তি সম্পাদন ও জমির দখল বুঝিয়ে দেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উক্ত ইয়াবা ও হুন্ডি কারবারিরা তাদের জমি দাবি করে প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়ে সাংবাদিকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে রাতারাতি মামলা রুজু করে। এদিকে উক্ত মামলা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে।

উক্ত অপহরণ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, জমিতে প্রবেশ করে মালিকের কাছ থেকে চাঁদা দাবি,  ভিকটিমদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন , বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার  ভয়ভীতি ও হুমকি ধমকি প্রদান করছে এমন কথা উল্লেখ থাকলেও  এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন উক্ত মামলার আসামি মৌলভি আলমগির।

তিনি জানান,প্রকৃত পক্ষে জমির মালিক আনোয়ারা বেগম গং এর সাথে আমাদের  লিখিত  চুক্তি ও জমির দখল বুঝিয়ে দেন।  উক্ত জমিতে কাউকে  কোনো প্রকার নির্যাতন ও হুমকি করা হয়নি। উক্ত ভিকটিমরা  নিজেদের ইচ্ছায় বাড়ি থেকে  অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ রয়েছে।তারা পৌরসভার আলিয়াবাদ এলাকার কবির বিল্লাহ নামক ভাড়া বাসায় গোপন অবস্থান নেয় । পরবর্তীতে  অপহরণ হয়েছে বলে পুলিশের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে।

পুলিশ তাদের মিথ্যা নাটক বুঝতে না পেরে মামলা রেকর্ড করেন। মামলার এজাহারে যাঁদের ভিকটিম বানানো হয়েছে তারা প্রকৃত আলিয়া বাদের বাসিন্দা নন। তারা রোহিঙ্গা বলে জানা গেছে, তদন্ত করলে তাদের প্রকৃত ঠিকানা বেরিয়ে আসবে। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে ফায়দা হাসিল করার জন্য রোহিঙ্গাদের ভিকটিম বানিয়ে অপরণ  মামলার নাটক সাজাই ইয়াবা কিংবা।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. নাসির উদ্দিন জানান,গত ১৬ মার্চ বিকালে কয়েকজন মহিলা ও পুরুষ নিয়ে সিএনজি যোগে  চলে যাচ্ছে দেখলাম।পরে তারা পৌরসভার আলিয়াবাদ কবির বিল্লাহ নামক ভাড়া বাসায় উঠে পরে জানতে পারি তারা নাকি অপহরণ হয়েছে। সেটি নিয়ে কৌশলে অপহরণের মামলা করে বলে শুনেছি। জমি জমা নিয়ে পূর্ব বিরোধ থাকার জের ধরে এ অপহরণ মামলার নাটক সাজিয়েছে বলে জানলাম। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে তাদের অপহরণ করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে সিনিয়র সাংবাদিক মো. শহিদ উল্লাহ বলেন,টেকনাফের আলোচিত আত্মসমর্পণকারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ী মো. আমিন গং জমি সংক্রান্ত বিষয়ে একজন সাংবাদিককে জড়িয়ে অপহরণ মামলা করেছে। যা ফলে আজ গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীনত বাধার মুখে। আমরা মনে করেছি তাদের ইয়াবা বাণিজ্য ও জায়গা জমি দখল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ প্রশাসন ওই ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আজ উল্টো সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই মামলা করে ইয়াবা কারবারি পরিবার। আমরা এ মিথ্যা মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি চেয়ে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) গিয়াস উদ্দিন বলেন, এজাহার দিয়েছে আমি মামলা রেকর্ড করছি। কেউ নির্দোষ হলে  তদন্ত করে দেখব। বিষয়টি নাটক হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫