সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের চাঞ্চল্যকর মোঃ আলী উল্লাহ আলো (৭) হত্যা মামলায় ৬ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে এবং দোষী প্রমাণিত না হওয়ায় দুজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর শিশু আলো’র পিতা এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
বুধবার কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন। একই মামলায় খালাস পেয়েছেন ২ আসামি।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন -মোঃ সুমন আলী, ইয়াছিন প্রকাশ রায়হান, মোঃ ইয়াকুব, মোঃ ইসহাক প্রকাশ কালু, নজরুল ইসলাম ও রোহিঙ্গা ছৈয়দুল আমিন প্রকাশ প্রকাশ লম্বাইয়া। এঁদের মধ্যে নজরুল ইসলাম, মোঃ সুমন আলী ও রোহিঙ্গা ছৈয়দুল আমিন প্রকাশ প্রকাশ লম্বাইয়া পলাতক। অন্যরা কারাগারে। খালাস পাওয়া দুজন হলেন আসামী মুহিবুল্লাহ ও মোঃ দিদার মিয়া। এসময় রায়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া আসামীর প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডও দেওয়া হয়েছে।
বাদীর আইনজীবীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদার বিল এলাকার রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও ফারজানা পারভীন সুইটি’র ৭ বছরের শিশু পুত্র মোঃ আলী উল্লাহ আলো-কে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র কর্মচারী মোঃ সুমন আলী বাড়ির সামনের কাচারি ঘরে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবী করার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যায়। পরে পাখির বাসা দেখানোর কথা বলে মোঃ আলী উল্লাহ আলোকে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র কাচারী ঘরের সিলিং উপর তুলে তার হাত পা বেঁধে মুখে জোর করে কচটেপ লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
এসময় মোঃ আলী উল্লাহ আলো শোর চিৎকার করলে আসামী মোঃ সুমন আলী ও অন্যান্যরা মোঃ আলী উল্লাহ আলো কে অপহরণ করার বিষয় বাড়ির লোকজন হয়ত জানতে পরেছে মনে করে। মোঃ আলী উল্লাহ আলো জীবিত থাকলে ঘটনা ফাঁস হতে পারে আশংকায় মোঃ আলী উল্লাহ আলো কে আসামীরা সিলিং উপর জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এঘটনায় খুন হওয়া বিজিবি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র মোঃ আলী উল্লাহ আলো’র পিতা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বাদী হয়ে ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৫ জন আসামীর নাম উল্লেখ করে এবং ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী দিয়ে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ১৩/২০১১ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর ৩৭০/২০১১ (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর ২০৮২/২০১৮ ইংরেজি।
মামলাটি পর্যায়ক্রমে টেকনাফ থানার এসআই মাহবুবুর রহমান, এসআই হারুনর রশীদ এবং টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার তদন্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাদী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে নারাজী আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত বাদীর নারাজীর আবেদন গ্রহণ করেন এবং ২০১৪ সালের ৪ মার্চ মামলাটি সিআইডি-কে অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে পর্যায়ক্রমে সিআইডি’র চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু, সহকারী পুলিশ সুপার এস.এম সাহাব উদ্দিন আহমদ এবং সর্বশেষ সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্টো জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির সরকার তদন্ত করে গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এজাহারভুক্ত ৫ জন সহ ৮ জন আাসামীর নাম উল্লেখ করে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪/১০৯/১১৪ ধারায় আদালতে সম্পূরক চার্জশীট দাখিল করেন।
সম্পূরক চার্জশীটে এজাহারভুক্ত ৫ জন আসামী যথাক্রমে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার কোদ্দ নারায়নপুরের মৃত আফতাব আলীর পুত্র মোঃ সুমন আলী (২৬), ঠাকুরগাঁও জেলার নিশ্চিন্তপুরের মৃত শামছুল হকের পুত্র ইয়াছিন প্রকাশ রায়হান (২৯), কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের শ্রীপুরের মৃত আসলাম মিয়ার পুত্র মোঃ ইয়াকুব (৩৪), টেকনাফের গোদার বিল গ্রামের আলী হোসেনের পুত্র মোঃ ইসহাক প্রকাশ কালু (৩১), টেকনাফের মহেশখালীয়া পাড়ার মৃত নবী হোসেনের পুত্র নজরুল ইসলাম (২৮)। এছাড়া তদন্তে প্রাপ্ত এজাহার বহির্ভুত আরো ৩ জন আসামী যথাক্রমে মায়ানমারের মংডু থানার ধনচি পাড়ার মৃত আবদুর রহিমের পুত্র রোহিঙ্গা ছৈয়দুল আমিন প্রকাশ লম্বাইয়া (৪৭), টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের মাঝের পাড়ার মৃত মৌলভী আবদুল জলিলের পুত্র মহিবুল্লাহ (৪৫), টেকনাফ পৌরসভার লেঙ্গুরবিলের জাফর আহমেদের পুত্র মোঃ দিদার মিয়ার (৩৫) বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়।
মামলাটি টেকনাফের আমলী আদালত থেকে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়। মামলার ৩ জন আসামী যথাক্রমে মোঃ সুমন আলী, ইয়াছিন প্রকাশ রায়হান ও মোঃ ইয়াকুব ১৬৪ ধারায় আদালতে আত্মস্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
২০২০ সালের ২৪ জুলাই কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলাটি চার্জ গঠন করে বিচারকার্য শুরু করেন। মামলায় ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও তাদেরকে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। এরপর আলামত প্রদর্শন ও পর্যালোচনা, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যাচাই, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন যাচাই, তিন জন আসামীর ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দী যাচাই, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ সকল বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি বুধবার রায়ের দিন ধার্য করে।
রায় নিয়ে সাংবাদিকদের দুঃখ প্রকাশ করে মোঃ আলী উল্লাহ আলোর বাবা মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় বিজ্ঞ আদালতের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা ও শোকরিয়া জানাই। তবে আমার সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করতে যারা অর্থ যোগান দিয়েছে এবং ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেছে; তাদেরকে খালাস দেওয়ায় খুবই দুঃখিত এবং মর্মাহত। আমি উচ্চ আদালতে তাদের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করব।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি পিপি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নৃশংসভাবে টেকনাফের বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আব্দুল্লার ছেলে ৭ বছরের শিশু পুত্র মোঃ আলী উল্লাহ আলো কে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ আসামীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১১ বছর মামলা কার্যক্রম পরিচালনা করে ছয়জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। এসময় অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় দুজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
সূর্যোদয় :- ৫:১০ | সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯ |
নাম | সময় |
ফজর | ৪:১৫ |
যোহর | ১২:১০ |
আছর | ৪:৫০ |
মাগরিব | ৬:৪৫ |
এশা | ৮:১৫ |