বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
Logo বাঁকখালী নদী তীরের ৭০ একর জমি উদ্ধার Logo রামুতে ই’য়াবা নিয়ে রোহিঙ্গাসহ ২ নারী আটক Logo কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে ইয়াবাসহ যুবদল-কৃষক দলের ৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার Logo টেকনাফে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাসহ দুষ্কৃতকারী আটক Logo টেকনাফে ডাকাতের পাহাড়ি আস্তানায় নৌ-বাহিনীর অভিযান, আ গ্নে য়া স্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার Logo ফের সাগরে মাছ শিকারের সময় ৩টি ফিশিং বোটসহ ১৮ মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে গেলো আরাকান আর্মি Logo টেকনাফে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও ইয়াবাসহ আটক ১ Logo ফোরজির সর্বনিম্ন গতি হবে ১০ এমবিপিএস, সোমবার থেকে কার্যকর Logo কক্সবাজার শহরে ৬০ হাজার ইয়াবাসহ আটক ১ Logo চট্টগ্রামে সম্প্রীতি জোরদারে টেকনাফের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ফ্রেন্ডলি টুর্ণামেন্টের আয়োজন

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে ইউএনও বনে গেছেন কামাল

রূপান্তর ডেস্ক
আপডেট শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন

প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আপন চাচা মুক্তিযোদ্ধা আহসান হাবীবকে বাবা এবং চাচি সানোয়ারা খাতুনকে মা সাজিয়ে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান কামাল হোসেন। বর্তমানে নওগাঁর আত্রাইয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদে কর্মরত আছেন তিনি। জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রকৃত বাবা-মায়ের পরিবর্তে তিনি তার চাচা-চাচির নামই ব্যবহার করেন।

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা পরিচয়ে প্রতারণা-জালিয়াতি করে কোটা সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরি নিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না। তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হেনস্তা করেন কামাল হোসেন। এলাকাবাসী তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কামাল হোসেনের জন্মদাতা বাবা মো. আবুল কাশেম ও গর্ভধারিণী মা মোছা. হাবীয়া খাতুন। কিন্তু তার সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সমস্ত কাগজপত্রে বাবার নামের জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা চাচার নাম ব্যবহার করেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং চাকরি করেন। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কামাল এখন  ইউএনও হয়েছেন। গত তিন বছর ধরে তার প্রতারণার বিষয়টি গ্রামের সবাই জানেন। তার অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতির প্রতিবাদ করলেই তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন কামাল। তিনি ও তাদের পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন কামাল।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা পরিচয়ে কোটা সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নেন। এই জালিয়াতির বিষয়টি গ্রামের বাসিন্দা অনেক আগে থেকেই জানতেন।

স্থানীয় বাবুল হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য চাচাকে বাবা বানানো হয়। কামালের বাবার নামের জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা চাচার নাম ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন এবং সরকারি চাকরি নিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পান কামাল। তবে কামালের প্রকৃত জন্মদাতা পিতা মুক্তিযোদ্ধা না। কামাল তো ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার মতো ছাত্র ছিলেন না।  তার চেয়ে কত ভালো ভালো ছাত্র এলাকায় ছিল। চাকরি পাওয়ার পরে তিনি অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নামে-বেনামে তার সম্পদ রয়েছে৷ জমি-সংক্রান্ত একটি ঝামেলার কারণে তার পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়। এলাকার মানুষ জানতে পারে যে, কামাল  মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আমরা কথা বলার সাহস পাই না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তিনি বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন। কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও করেছেন।

তিনি আরও বলেন, কামাল হোসেন ও তার পরিবারের সব অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করে তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। তার অত্যাচারে আমরা এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। সরকার তার যথাযথ বিচার করুক। এত বড় অন্যায় জালিয়াতি, তবুও তিনি এখনো কীভাবে চাকরি করেন?

জানা গেছে, নওগাঁর আত্রাইয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামাল হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সিরাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি এবং ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাকালীন বাবার নাম হিসেবে তার প্রকৃত জন্মদাতা পিতা মো. আবুল কাশেমের নাম ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে একই স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে তিনি তার আপন চাচা মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব এবং চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে বাবা-মা সাজিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন এবং এসএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রি পরীক্ষায় চাচা-চাচির নামই বাবা-মার নাম হিসেবে ব্যবহার করেন।

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা সাজিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চরম প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণপূর্বক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি গ্রহণ করেছেন কামাল হোসেন।

আত্রাইয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. কামাল হোসেনের জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে বাবা-মায়ের নামের স্থলে চাচা-চাচির নামই উল্লেখ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগের উদ্দেশে তিনি আপন চাচা-চাচিকে বাবা-মা সাজিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চরম প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি গ্রহণ করেছেন। আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, দুদকে মামলা হয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছেন। তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দোষী হলে তিনি শাস্তি পাবেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কামাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। কামাল হোসেনের প্রকৃত জন্মদাতা মো. আবুল কাশেমের ও আপন চাচা মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫