পৃথিবীর প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম ভয়াবহ। কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই মুহূর্তের মধ্যে আঘাত হানা এই বিপর্যয় মানুষকে আতঙ্কিত করে, ঘটায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি। সাম্প্রতিকবার ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ধারাবাহিক কম্পনের পর মানুষ আবারও ভাবনায় পড়েছে—ভূমিকম্পের কারণ কী, আর এই সময়ে নিরাপদ থাকতে কী করণীয়?
ইসলামি দৃষ্টিতে ভূমিকম্পকে শুধু ভূগর্ভস্থ প্লেট সরণের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হিসেবে নয়, বরং মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা হিসেবেও বিবেচনা করা হয়েছে। মানুষের পাপাচার, অবাধ্যতা ও অনৈতিক আচরণ থেকে ফিরে আসার আহ্বান হিসেবে কোরআন ও হাদিসে একাধিক নির্দেশনা এসেছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসে, তা তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল; এবং আল্লাহ অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।” —সুরা শুরা: ৩০
আরও বলেন, “জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় যে, আমার আজাব আসবে না রাতে, যখন তারা ঘুমে বিভোর?” —সুরা আরাফ: ৯৭
সুরা হজে কিয়ামতের দিন ভয়াবহ ভূকম্পনের বর্ণনা দিয়ে মানুষকে সতর্ক হতে বলা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন হবে এবং মদ পান বৃদ্ধি পাবে, তখন এ উম্মত ভূমিকম্প ও পাথর বর্ষণের মুখোমুখি হবে।”—তিরমিজি ২২১২
আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, ভুলভাবে সম্পদ ভোগ, জাকাতকে জরিমানা মনে করা, বাবা-মাকে অবহেলা করা, দুর্বলদের হাতে ক্ষমতা—এসব অবস্থায় ভূমিকম্প ও অন্যান্য নিদর্শন বাড়তে থাকবে।
দুর্যোগের সময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে রাসূল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি এই দোয়া দিনে তিনবার পড়ে, আল্লাহ তাকে আকাশ ও পৃথিবীর সব বিপদ থেকে রক্ষা করেন:
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল লাজি লা ইয়াদুররু মা‘আস মিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামি‘i ওয়াহুয়া সামিয়ুল আলিম।
ভূমিকম্প অনুভূত হলে মাটির দিকে তাকিয়ে ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা শারিকালাহু, ফাবি আইয়্যে আ’লাঈ রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান’ পড়তে বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত কম্পন থেমে না যায়। পাশাপাশি আরও একটি দোয়া পড়া যেতে পারে—
উচ্চারণ: আন্তা ওয়ালিয়্যুনা ফাগফিরলানা ওয়ার হাম্না, ওয়া আন্তা খইরুল গফিরিন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের অভিভাবক—সুতরাং আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনি সর্বাধিক ক্ষমাশীল। (সূরা আরাফ, আয়াত ১৫৫)
ভূমিকম্পের সময় “আল্লাহু আকবার” বলতে ও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
ভূমিকম্প এড়ানো সম্ভব না হলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে সঠিক প্রস্তুতি বড় ধরনের বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। সাম্প্রতিক কম্পন বিশ্লেষণে তারা যে করণীয়গুলো জানিয়েছে তা হলো—
ভূমিকম্পের সময় ঘরের ভেতরে থাকলে
মজবুত টেবিল বা ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিন।
হাত দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন।
বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে নড়াচড়া না করাই নিরাপদ।
দরজা বা জানালা থেকে দূরে থাকুন।
ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি থাকলে
দ্রুত খোলা জায়গায় চলে যান।
সময় না পেলে ভবনের পিলার বা কলামের পাশে দাঁড়ানো তুলনামূলক নিরাপদ।
যন্ত্রপাতি ও আগুনের ঝুঁকি থাকলে
গ্যাস চুলা, ফ্রিজ, টেলিভিশনসহ সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বন্ধ করুন।
দেয়াল বা সিলিং ভেঙে পড়লে নাক-মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন।
লিফট ব্যবহার করবেন না
কম্পন চলাকালীন বা কম্পন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লিফট অত্যন্ত বিপজ্জনক।
শুধুমাত্র সিঁড়ি ব্যবহার করে নিচে নেমে যান।
বাইরে থাকলে
ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, বড় গাছ বা বৈদ্যুতিক খুঁটির কাছ থেকে দূরে যান।
গাড়িতে থাকলে নিরাপদ স্থানে গাড়ি থামিয়ে ভেতরে অপেক্ষা করুন।
জরুরি কিট রাখুন
টর্চলাইট, ব্যাটারি, রেডিও, পানির বোতল, শুকনো খাবার, ফার্স্ট এইড বক্স প্রয়োজনীয় ওষুধ
ইসলামি দৃষ্টিতে যেমন ভূমিকম্প মানুষের জন্য আত্মসমালোচনা ও তাওবার এক স্মরণিকা, তেমনি বিজ্ঞানের মতে এটি পৃথিবীর ভৌগোলিক প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ। দুটোরই মূল শিক্ষা—অবহেলা নয়, প্রস্তুতি।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব না হলেও সচেতনতা, শিক্ষা এবং প্রস্তুতিতে প্রাণহানি ও ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব।
| সূর্যোদয় :- ৫:১০ | সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯ |
| নাম | সময় |
| ফজর | ৪:১৫ |
| যোহর | ১২:১০ |
| আছর | ৪:৫০ |
| মাগরিব | ৬:৪৫ |
| এশা | ৮:১৫ |