ঘর থেকে ঘুরতে বাহির হয়ে পথ হারিয়ে পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন মোহাম্মদ মোস্তফা (৪৪)। সে জামালপুরের বকশিগঞ্জ পৌরসভার চরকাউরিয়ার পাখিমারা গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবদুল মজিদ মুন্সির পুত্র। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট মোস্তফা।
তিনি পেশায় একজন গাড়ি চালক ছিলেন। বিয়ে করেন একই এলাকার ময়না বেগমকে। মোস্তফা ও ময়না দম্পতির সংসারে ২য় কন্যা সন্তান ভূমিষ্টের চার মাসের মধ্যে হঠাৎ মোস্তফা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে ময়না অন্যত্র বিয়ে করলেও তাদের কিশোরী মেয়ে মনিরা বেগম জন্মদাতা পিতাকে ফিরে পাবার আশায় বুক বেঁধে ছিলেন।
নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মোস্তফার কিশোরী কন্যা মনিরা বেগম বলেন, আমার জন্মের পর বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে মা অন্যত্র বিয়ে করায় দু’বছর বাবা-মায়ের ছায়াবিহীন পার করেছি। তবে বাবাকে ফিরে পাওয়ায় আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। স্বজন হারানোর কষ্ট আমি বুঝি। তাই কারো জীবনে যেন এমন ঘটনা না ঘটে।
মারোতের সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় দুই বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঘুরতে ঘুরতে টেকনাফ চলে আসেন মোস্তফা। নিয়মিত মারোতের দেওয়া খাবার খেতেন তিনি। অন্য মানসিক রোগীদের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক মনে হওয়ায় মারোতের সদস্য মোহাম্মদ ফেরদৌস ইসলাম তার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে জামালপুরের পাখিমারা বলে জানায় সে। তখন মোস্তফার একটি ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পাশাপাশি প্রশাসনের সহযোগিতায় বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির আলমাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনিই মোস্তফার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।এরপর ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা মোস্তফাকে শনাক্ত করেন।
মারোতের সদস্য মোহাম্মদ ফেরদৌস ইসলাম বলেন, প্রায় সময় মোস্তফাকে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে রাখার চেষ্টায় ছিলাম।কিভাবে পরিবারের কাছে পাঠানো যায় সেইভাবে কাজ শুরু করি। বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির আলমাসকে অনেক বিরক্ত করেছি। কিন্তু হাল ছাড়িনি। প্রতিনিয়ত মোস্তফার পরিবারের একাধিক লোকজনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগের চেষ্টায় ছিলাম। সেই সুত্র ধরে মোস্তফাকে ফিরিয়ে নিতে টেকনাফ আসেন তার বড় ভাই মোহাম্মদ আবু বক্কর আকন্দ ও ভাগিনা মোহাম্মদ আবু রায়হান।
মোস্তফার বড় ভাই মোহাম্মদ আবু বক্কর আকন্দ বলেন, পরিবারের ধারণা ছিল হয়তো করোনাকালীন কোথাও মারা গিয়েছে। কিন্তু আমাদের ধারণা ভুল প্রমাণ হয়েছে। আজ দুই বছর পরে ভাইকে ফিরে পেয়েছি। আমার পুরো পরিবার মারোতের প্রতি আজীবন চিরকৃতজ্ঞ ও চিরঋণী।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু বলেন, মানবতার উজ্জ্বল উদাহরণ মারোত নামক এই সংগঠনটি। কিছু উদ্যোমী ও মানবিক ব্যক্তি নিয়মিত মানসিক রোগীদের নানা ধরনের সহযোগিতার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা ও খাবার দিয়ে আসছে। এই সংগঠনের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।
সূর্যোদয় :- ৫:১০ | সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯ |
নাম | সময় |
ফজর | ৪:১৫ |
যোহর | ১২:১০ |
আছর | ৪:৫০ |
মাগরিব | ৬:৪৫ |
এশা | ৮:১৫ |