কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের পাড়া মহল্লায় অনলাইন জুয়ায় আসক্ত যুব সমাজের সংখ্যা বেড়েই চলছে। উক্ত খেলায় লিপ্ত হয়ে ক্ষণিকের ব্যবধানে কোটি কোটি টাকা হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে শত শত তরুণ উদিয়মান যুবক।
ভুয়া ফেইসবুক আইডি ও দেশী-বিদেশী অনলাইনে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে এবং পরিচিত বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সল্প সময়ের মধ্যে বেশি টাকা মুনাফার আশায় অনলাইন জুয়া খেলায় মত্ত হয়ে পড়েছেন।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে টেকনাফের স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অনলাইন জুয়ায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। জুয়ায় সর্বোচ্চ হারিয়ে অনেক পরিবারে নেমে এসেছে অভাব অনটন।
টেকনাফ পৌর শহরের বিভিন্ন মার্কেটে ও পাড়া মহল্লায় অবস্থিত কম্পিউটার দোকান,বিকাশ দোকান গুলোতে কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছে এই অনলাইন জুয়ার প্রচারনা কার্যক্রম।
আবার বড় মাপের জুয়ার এজেন্টরা নিজ ঘরে বসে চালাচ্ছে তাদের অনৈতিক কার্যক্রম। পাশাপাশি এই অনলাইন জুয়ায় লিপ্ত এজেন্টরা অবৈধ পন্থায় বনে যাচ্ছে কোটিপতি। আর বেশি টাকা আয়ের আশায় জুয়ায় আসক্ত জুয়াড়িরা প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, টেকনাফর বেশ কয়েকজন নাম করা ব্যবসায়ী অনলাইন জুয়ায় লিপ্ত হয়ে ব্যবসার সমস্ত মূলধন হারিয়ে এখন পথে বসেছে। অনেকেই আবার জুয়া খেলার টাকা পরিশোধ করতে নিজের জায়গাজমি,বসতবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছে।
কেউ কেউ জুয়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে প্রতিবেশী ও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করেছে। সেই টাকা সময় মতো পরিশোধ করতে না পেরে ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। অনেক জুয়াড়ি টাকা সংগ্রহ করার জন্য চুরি,ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এতে জুয়াড়িদের পরিবারে সৃষ্ট হওয়া মানসিক অশান্তি গুলো চোখে পড়ার মতো।
টেকনাফ পৌরসভা অলিয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা ”ছদ্ধ নাম ছৈয়দ’ অনলাইনে জুয়া খেলে কয়েক মাসের মধ্যে দুই কোটি টাকা হারিয়ে সে এখন পলাতক। কারণ এই ছৈয়দ অনলাইনে জুয়া খেলার সময় বন্ধুদের কাছ থেকে অনেক টাকা ধার নিয়েছিল।
পৌরসভা ৯নং ওয়ার্ড কুলালপাড়া এলাকার বাসিন্দা ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ‘সাইফুল’ অনলাইন জুয়াড়িদের ফাঁদে পড়ে তার বাবার কষ্টের আয়ের আলমেরিতে রাখা ৮ লাখ টাকা জুয়া খেলায় হারিয়েছে।
তথ্য নিয়ে নিয়ে জানা যায় টেকনাফ সদর ইউনিয়ন মৌলভীপাড়ার এলাকার বাসিন্দা জুয়াড়িদের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত অভি নামে শীর্ষ এক জুয়াড়ি অবৈধ পন্থায় জুয়া খেলে বনে গেছে কোটিপতি। আবার সেই এলাকার বা কুইচ্চা নামে এক গত কয়েক মাসের মধ্যে জুয়ায় কোটি টাকা হারিয়ে নি:স্ব হয়ে গেছে।
টেকনাফের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আরো জানা যায়, অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগ তরুণ।
এই খেলায় লিপ্ত হয়ে এই সমস্ত তরুণদের লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের অনৈতিক কাজে।
আবার নিজ সন্তানদের অনলাইন জুয়া খেলা থেকে ফেরত আনতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীর দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ বলেন, অনলাইন জুয়া খেলা প্রতিরোধে সর্বপ্রথম ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি এজেন্ট ভিত্তিক শীর্ষ জুয়াড়িদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সঠিক তথ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে সহায়তা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, অত্র উপজেলায় চলমান এই অনলাইন জুয়া খেলাটি এখন নীরব মহামারিতে পরিণত হয়েছে।
যা সমাজ ও ভুক্তভোগী পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে দিচ্ছে। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজপড়ুয়া ছাত্রদের মধ্যে মারাত্মক হারে বেড়েছে এই খেলা। তাদের দাবি এই মহামারি বন্ধ করার জন্য স্ব-স্ব এলাকায় সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুললে দিনের পর দিন সর্বোচ্চ হারিয়ে ধ্বংসের পথে ধাবিত হবে যুবসমাজ।
এবিষয়ে টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে দায়িত্বরত ডাক্তার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, অনলাইন জুয়ায় আসক্তি এটি একটি ভয়ংকর রূপ।
এই খেলায় আসক্ত হওয়া ব্যক্তিরা শুধু আর্থিক ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তারা মানসিক ভাবে চাপে পড়েছে এবং বিষণ্নতায় ভুক্তভোগী হওয়ার পর আত্মহত্যার পথও বেছে নেওয়ার আশংকা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, দেশে অনলাইন জুয়া আইনত নিষিদ্ধ রয়েছে। উক্ত অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে সদা প্রস্তুত রয়েছে আমাদের বাহিনী।
অত্র উপজেলার অনলাইন জুয়ায় লিপ্ত এজেন্টদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
| সূর্যোদয় :- ৫:১০ | সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯ |
| নাম | সময় |
| ফজর | ৪:১৫ |
| যোহর | ১২:১০ |
| আছর | ৪:৫০ |
| মাগরিব | ৬:৪৫ |
| এশা | ৮:১৫ |