ড. হোছাইন আহমদ কামালী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মতো একটি মহান পেশায় নিয়োজিত আছেন। জীবিকার তাগিদে জন্মভূমির বাহিরে অবস্থান করলেও সময় পেলেই তিনি নাড়ির টানে ছুটে আসেন সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে। অজপাড়া গাঁয়ে জন্ম হলেও তিনি নিজস্ব প্রতিভায় নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
জন্ম ও শৈশবঃ-
ড. হোছাইন আহমদ কামালী ১৯৬৭ সালে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের কচুবনিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুর রশিদ ও মাতা খাদিজা বেগম ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার এবং ধার্মিক। বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্রসন্তান ড. হোছাইন আহমদ কামালী ছিলেন শৈশব থেকে সুচিন্তার অধিকারী। ছাত্রজীবন থেকে এলাকার শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসরতা, সামাজিক বৈষম্যতা দেখে তিনি খুবই মর্মাহত হতেন। তাই একটি আধুনিক ও সভ্য সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যাশা নিয়ে নিজ গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সরকারি স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়ে অত্র এলাকায় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
ব্যক্তিজীবনঃ-
সাংসারিক জীবনে তিনি দুই পুত্র ও দুই কন্যার জনক। তাঁর বড় মেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বড় ছেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগ থেকে এমবিএ করেছেন। ছোট মেয়েও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে এবং ছোট ছেলে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্টিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কোয়ার্টারে পরিবার সহ বসবাস করছেন।
শিক্ষা জীবনঃ-
হোছাইন আহমদ কামালী তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন গ্রামের একটি মক্তবে। সেখান থেকে পবিত্র কোরআন শরীফ শিক্ষা সমাপ্ত করেন। মক্তবের পাঠ সমাপ্ত করে তিনি ভর্তি হন কক্সবাজার জেলার অতি প্রাচীন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্টান নামে খ্যাত টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেংগুর বিল বড় মাদ্রাসায় (কওমী মাদ্রাসা)। সেখান থেকে “নেসাবে জামাতে হাস্তুম” পর্যন্ত পড়াশুনা করেন।জ্ঞান পিপাসু এই মানুষটি সীমাবদ্ধ জ্ঞান ও ফ্রেমবন্দি জীবন থেকে বের হয়ে জ্ঞানের সাগরে তরী ভাসানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মা ও মাতৃভূমির ভালবাসা ত্যাগ করে সুদূর টেকনাফ থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এরপর চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গারাঙ্গগিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৮১ সালে উক্ত প্রতিষ্টান থেকে কৃতিত্বের সাথে আলিম পাস করেন।পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রামস্থ পাথরঘাটা ছোবাহানিয়া আলীয়া মাদ্রাসা থেকে ফাযিল পাস করেন। জ্ঞান অন্বেষণকারী অজপাড়া গাঁয়ের ক্লেদাক্ত মেটো পথের দামাল ছেলে তাঁর বুকে ধারণ করা অদৃশ্য স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আবার পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। সেখানে তিনি ঢাকা বকসী বজারস্থ সরকারি আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ঢাকা আলীয়ায় অধ্যয়নরত অবস্থায় স্বপ্ন দেখেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার। ইচ্ছা শক্তি, কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় তাঁর জীবনের সমস্ত পণ্খিলতাকে দু’পায়ে মাড়িয়ে জ্ঞানের জগতে অনুপ্রবেশ করার উচ্চ আকাংখা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং কৃতিত্বের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতাও অর্জন করেন। তিনি দৃঢ়চিত্তে উর্দু ভাষা বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতে থাকেন। ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উর্দু বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে বিএ (সম্মান) এবং এমএ (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন “আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট” থেকে আধুনিক ফার্সি ও আরবী ভাষার উপর বিভিন্ন কোর্স কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে ডিপ্লোমা ডিগ্রী লাভ করেন। এ অদম্য মেধার অধিকারী কামালী তাঁর সংগ্রামী ও বৈচিত্রময় শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি না টেনে জ্ঞান অন্বেষণের প্রবল মনোবল নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আবদুল হকের তত্ত্বাবধানে “স্যার সৈয়দ আহমদ খাঁ এর জীবন, শিক্ষা, সংস্কার ও সাহিত্যকর্ম ” শিরোনামে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্মজীবনঃ-
ড. হোছাইন আহমদ কামালী ১৯৯৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ের ভাষা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। বর্তমানে উর্দু বিভাগের তিনি প্রফেসর পদে কর্মরত আছেন। বলতে গেলে উক্ত বিভাগের বর্তমান সকল শিক্ষকগণ তাঁর শিক্ষার্থী। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের সভাপতি ড. মো. রেজাউল করিম তাঁর প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ড. কামালীর তত্ত্বাবধানে তিনি পিএইচডি গবেষণাকর্মও সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি নয়টির অধিক পিএইচডি গবেষণার তত্ত্বাবধান করেছেন।বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য এমফিল, পিএইচডি গবেষণা মূল্যায়ন ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করে দেশ ও জাতিকে মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছেন। তাঁর অসংখ্য গবেষণামূলক প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষানুরাগী ড. হোছাইন আহমদ কামালী অধ্যাপনার পাশাপাশি অদ্যাবধি নিজেকে গবেষণাকর্মে নিয়োজিত রেখেছেন।
প্রশাসনিক দক্ষতাঃ-
শিক্ষকতা ও নানান গবেষণার পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব অত্যন্ত সুনামের সাথে পালন করেন। এছাড়া তিনি ০১/১০/২০০৬ খ্রি: থেকে ৩০/০৯/২০০৯ খ্রি: পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষা ও সমাজ সেবাঃ-
এ শিক্ষানুরাগী মানুষটি ১৯৮৬ সালে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের কাটাবনিয়া-কচুবনিয়া বেসরকারি (রেজিস্ট্রার্ড) প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণ করা হয়েছে। এছাড়া তিনি নিজ এলাকাকে একটি আধুনিক ও আদর্শ এলাকা হিসাবে গড়ে তুলার প্রত্যাশা নিয়ে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর নিজস্ব জমি ও অর্থায়নে একটি দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। মাদ্রাসার আনুসঙ্গিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের শেষ পর্যায়ে একটি দক্ষ ও শক্তিশালী পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে ছাত্র/ছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম শুরু করবার পরিকল্পনা রয়েছে।
সূর্যোদয় :- ৫:১০ | সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯ |
নাম | সময় |
ফজর | ৪:১৫ |
যোহর | ১২:১০ |
আছর | ৪:৫০ |
মাগরিব | ৬:৪৫ |
এশা | ৮:১৫ |