জেলা জুড়ে চলছে জ্বর ও সর্দির প্রকোপ। ঘরে ঘরে আক্রান্ত রোগি। হাসপাতালে বেড ভাগাভাগি করে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। বাড়িতে একজন আক্রান্ত হলেই পেয়ে বসছে জ্বর পুরো পরিবারজুড়ে। জ্বরের তীব্রতা এতই বেশি যে পুরো শরীর তীব্র ব্যাথার সাথে অনেকের শ্বাসকষ্টও হচ্ছে।
সিভিল সার্জন বলছেন, এই জ্বরের চিকিৎসা করলে সেরে যাবে। আতংকিত না হয়ে বাসায় বসেও চিকিৎসা নিলে সপ্তাহের মধ্যে সেরে যাবে এ জ্বর। তবে গেল ২ সপ্তাহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এত সংখ্যক রোগির সমাগম যে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: সবুক্তগীন মাহমুদ সোহেল জানান- ২৫০ শয্যার হাসপাতালে বর্তমানে (৯ আগস্ট) ভর্তি রোগি ৬৭৮ জন। গতকাল শনিবার আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে ১১৫৭ জন রোগি। অর্থাৎ গতকাল ১ দিনে চিকিৎসা দিয়েছেন ১৮শ এর অধিক রোগি। দুই তৃতীয়াংশ এসেছেন সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। শিশু ওয়ার্ডের অবস্থা ভয়াবহ। আমাদের চিকিৎসকগণ নির্ঘুম সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে ডেঙ্গু ও চিগুণগুনিয়া রোগের ভয় নেই। আউটডোর ও ইনডোর মিলে গত ১ সপ্তাহে প্রায় ৬ হাজার রোগি চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যেই প্রায় ৪ হাজার জন রোগি জ্বর ও সর্দি আক্রান্ত। বেশিরভাগ শরীরে ব্যাথা নিয়ে এসেছেন। শিশু ওয়ার্ড, মহিলা ওয়ার্ড, জরুরি বিভাগ, প্রতিটি ইউনিটের হাঁটার জায়গায় রোগিদের আলাদা বেড বসিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এক বেডে ৩ জন রোগি শেয়ার করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সবুক্তগীন।
শহরের বেসরকারি ও সদর হাসপাতালে ঘুরে যে চিত্র উঠে এসেছে তা ভয়াবহ। আক্রান্ত ছোট-বড় সবাই। সিজনাল এই জ্বরে কাবু হচ্ছেন আক্রান্তরা। জ্বরের সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আক্রান্তদের ভুগতে হচ্ছে এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত। জ্বর ভালো হওয়ার পরও শারীরিক ক্লান্তি থাকছে দীর্ঘদিন। যার ছাপ পড়ছে দৈনন্দিন কাজে। ঠিকমতো খেতে পারছে না অনেকেই। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক, শ্বাসকষ্টজনিত রোগী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সদরের খরুলিয়া থেকে সদর হাসপাতালে আসা গৃহবধূ শাহেদা বেগম বলেন- ৫/৬ দিন প্রচন্ড জ্বর ও শরীর ব্যাথা নিয়ে স্থানীয় চিকিৎসক যে চিকিৎসা নিয়েছেন তা ভালো না হওয়ায় গতরাত ৯-১০টার দিকে অবস্থা খারাপ হলে সদর হাসপাতালে চলে আসি। জ্বরের তীব্রতাটা একটু বেশি ছিল যে সহ্য করতে পারিনি। সেই সঙ্গে পুরো শরীর প্রচণ্ড ব্যথা। যার কারণে ভয়ও পেয়েছিলাম। এখন একটু ভালো লাগছে। পরিবারের আরো ৪ জনকে বাসায় চিকিৎসা দিচ্ছেন বলেও তিনি জানান।
সদর হাসপাতাল, ইউনিয়ন হাসপাতাল, আল ফুয়াদ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, ডিজিটাল হাসপাতালেসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমুহে ও আসা বেশিরভাগ রোগি জ্বর, বমি ও শরীর ব্যাথা নিয়ে আসছে বলে হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে। কেউ কেউ করোনা, কিছু রোগি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কিংবা টাইফয়েড আক্রান্ত। রোগীদের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে-দুই থেকে থেকে তিন দিন স্থায়ী জ্বর, গলাব্যথা, হালকা কাশি, মাথা ও পুরো শরীর ব্যথা, দুর্বলতা এবং কিছু ক্ষেত্রে হালকা শ্বাসকষ্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু, টাইফয়েড ও মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ। দুই থেকে তিন দিনের জ্বর নিয়ে আসছেন রোগীরা। একজনের জ্বর হলে পরিবারের অন্যরাও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। উপসর্গও প্রায় একই রকম।- বেশি আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ ভাইরাস ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বরে।
আক্রান্ত এসব রোগিদের চিকিৎসা বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদুল হক বলেন – হালকা উপসর্গ দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে ঘরে বিশ্রাম নিতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মাস্ক পরা ও গরম, তরল খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা নেয়া জরুরি। তিনি বলেন জ্বর আসলে কোনো রোগ নয়, বরং এটি রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ। অনেক কারণে জ্বর হতে পারে। সবচেয়ে কমন হলো ঠান্ডা লেগে জ্বর হওয়া বা সর্দি-কাশির কারণে জ্বর। এর বাইরে শরীরের ভেতরে কোনো কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ হলে অর্থাৎ ইনফেকশন হলে জ্বর হতে পারে। এছাড়া টিকা নিলে, ফোড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে, পিরিয়ডের কারণে, আকস্মিক ভয় পেলে বা মানসিক আঘাত পেলেও জ্বর হতে পারে। প্রতিবছর এই সময়ে এ রোগ বৃদ্ধি পায়।
তিনি সবাইকে আতংকিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
সূর্যোদয় :- ৫:১০ | সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯ |
নাম | সময় |
ফজর | ৪:১৫ |
যোহর | ১২:১০ |
আছর | ৪:৫০ |
মাগরিব | ৬:৪৫ |
এশা | ৮:১৫ |