শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ

জটিল হচ্ছে প্রত্যাবাসন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন
# রোহিঙ্গা সংকটের আট বছর

মিয়ানমার থেকে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। আট বছর কেটে গেলেও এখনো একজন রোহিঙ্গাও নিজভূমিতে ফিরতে পারেনি। রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির হাতে, যা প্রত্যাবাসনের পথ আরও কঠিন করে তুলেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের নিকটবর্তী সিকদারপাড়া গ্রাম। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর জান্তা বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ওই গ্রামের হাফেজ আহমদ (৪৫)। সে সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি পা হারান। রাখাইনের সিকদারপাড়া গ্রামে সেনা অভিযানের ভয়াবহতা আজও তাড়া করে বেড়ায় তাকে। গেল আট বছর ধরে উখিয়ার মধুরছড়ার ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরে বসবাস করছেন তিনি। বেঁচে ফিরলেও এখনো ফেরা হয়নি নিজের ঘরে।
হাফেজ আহমদের কাছে এখন স্বদেশে ফেরত যাওয়া অসম্ভব একটি বিষয়। তার প্রশ্ন, কোথায় ফিরবেন? ওখানে কি ফেরার মতো পরিবেশ আছে?

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসার পর অনেক আত্মীয়-স্বজন গ্রামে ছিলেন। কিন্তু এখন আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর গ্রামটির আর কোনো অস্তিত্ব নেই। সেখানে একজন রোহিঙ্গাও নেই। অনেকেই নতুন করে পালিয়ে এসেছেন, আবার অনেকে পালানোর চেষ্টা করছেন।’

তিনি জানান, রাখাইন রাজ্যে এখন রোহিঙ্গাদের গ্রামের কোনো অস্তিত্ব নেই। ফলে ফেরার পথও নেই।

হাফেজ আহমদের মতো লাখো রোহিঙ্গার আস্থা নেই আর স্বদেশে ফেরা নিয়ে। আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন রাখাইনে প্রত্যাবাসন এখন যেন কেবল কাগজে-কলমে।

উখিয়ার ৩ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নছিমা খাতুন বলেন, ‘খুব মনে পড়ছে দেশের কথা। রাত-দিন কান্না করি দেশে ফেরার জন্য। কিন্তু আরাকান আর্মির অত্যাচারের ভয়ে যেতে পারছি না। এখনো সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।’

গেল তিন মাস আগে মিয়ানমারের মিঙ্গিঞ্জি এলাকা থেকে পালিয়ে এসে উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পে আশ্রয় নেন নুরুল হাকিম (৫০)। তিনি বলেন, ‘আরাকান আর্মি আমাদের দেশ দখল করে নিয়েছে। তারা দাবি করছে, আমাদের কিশোর-কিশোরি সন্তানদের তাদের কাজে নিয়োগ দিতে হবে। অস্বীকৃতি জানালে তারা রাতে এসে সন্তানদের ধরে নিয়ে যায় এবং যুদ্ধে সামনের সারিতে দাঁড় করিয়ে দেয়। প্রতিটি পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করছে। এত টাকা দেয়া সম্ভব নয় বলেই আমরা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি।’

একই ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা রশিদ উল্লাহ (৪৬) বলেন, ‘এখন আমাদের ফেরার সব পথ বন্ধ। ফিরে যেতে চাইলে আরাকান আর্মি গুলি চালাবে, অসংখ্য মানুষ মারা যাবে।’

বর্ধিত ৪ নম্বর ক্যাম্পের যুবক আনিছুল হক (২২) বলেন, ‘তারা বলছে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে ফেরত নেবে। কিন্তু কোথায় রাখবে সেটা বলছে না। সেখানে এখনো হত্যা চলছে, তাই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।’
মূলত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক তৎপরতা, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও জাতিসংঘের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও প্রত্যাবাসনের কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। এর মধ্যে আরাকান আর্মির দখল পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

গেল বছর থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলনে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। মিয়ানমার ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা পর্যালোচনা করে ১ লাখ ৮০ হাজারকে ফেরত নেয়ার জন্য উপযুক্ত বলে স্বীকার করে। কিন্তু এখনও কোনো বাস্তব অগ্রগতি নেই।

উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পের হোসেন আলী বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা চাই, মর্যাদাসম্পন্ন প্রত্যাবাসন চাই। এখন রাখাইন তো আরাকান আর্মির দখলে, সেখানে কীভাবে নিরাপত্তা পাবো?’

ক্যাম্পের বাসিন্দা বদরুল ইসলাম বলেন, ‘জান্তা সরকার যদি ফেরত নেয়ও, রাখাইনে পাঠাবে। অথচ ওখানে এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ।’

অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের এখন নিজস্ব একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা উচিত।

বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, ‘প্রত্যাবাসন কোথায় হবে, কীভাবে হবে, তা পরিষ্কার নয়। এখন তো রাখাইন আরাকান আর্মির দখলে। মিয়ানমার সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে রয়েছে আরাকান আর্মির বিরোধ। নতুন করে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। ফলে প্রত্যাবাসন কবে আলোর মুখ দেখবে বলা যাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ চাইলে আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি রোডম্যাপ বা কর্মকৌশল তৈরি করতে পারে। এই সংকট দ্রুত সমাধান হবে না। তাই দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।’

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘দিন দিন জটিল হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে সবকিছুর পরও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

রোহিঙ্গা সংকটের আট বছর পূর্তিকে সামনে রেখে আজ ২৪ থেকে আগামী ২৬ আগস্ট কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা সম্মেলন। এতে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ দেশি-বিদেশি বিশিষ্টজনেরা। এই সম্মেলন থেকে কোনো বাস্তব অগ্রগতির বার্তা আসবে কি না, তা জানার অপেক্ষায় কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরগুলো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫