মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
Logo ঘূর্ণিঝড় মোন্থা: নতুন বিপদে জেলেরা Logo উখিয়া-টেকনাফে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে উত্তাপ : কেন্দ্রীয় বৈঠকে চার নেতার মূল্যায়ন সম্পন্ন Logo হ্নীলা পল্লী চিকিৎসক সমিতির কমিটি গঠিত; সভাপতি সোহেল, সম্পাদক ওসমান সরওয়ার Logo এবার আরাকান আর্মির হাতে আটক ৪ জেলে Logo রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছুতেই থামছে না অপরাধ Logo গহীন পাহাড় থেকে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার ২২ Logo কুতুবদিয়ায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন, আটক ১ Logo জিন্মিশালা থেকে আবারও উদ্ধার ১৯, পাচার চক্রের ৪ সদস্য আটক Logo বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ কিশোর, ১৭ ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার Logo কক্সবাজার বিমানবন্দর : আন্তর্জাতিক ঘোষণা স্থগিত, হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ীরা

ঘূর্ণিঝড় মোন্থা: নতুন বিপদে জেলেরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই নতুন বিপদে পড়েছেন কক্সবাজার উপকূলের জেলেরা। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে সাগর এখন উত্তাল। ফলে প্রস্তুতি থাকলেও জেলেরা সাগরে ইলিশ শিকারে নামতে পারছেন না। এতে হতাশ ট্রলারের মালিক ও জেলেরা।
নিষেধাজ্ঞা শেষ, কিন্তু সাগর এখনো অশান্ত। ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই কক্সবাজারের জেলেরা যখন ইলিশ ধরতে সাগরে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড়। এতে উত্তাল সাগর।
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলে টানা নিষেধাজ্ঞা। শনিবার রাত ১২টা থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও, বৈরি আবহাওয়ার কারণে সোমবারও ঘাটে নোঙর করে আছে শত শত ট্রলার। আর দুশ্চিন্তায় বেকার সময় পার করছেন জেলেরা।

সোমবার দুপুরে সরেজমিনে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬নম্বর ঘাট, চেয়ারম্যান, ফিশারিঘাট ও মাঝের ঘাটে দেখা যায়- জেলেরা উপকূলে স্তুপ করা জালের ওপর বসে রয়েছে। তবে কারো মুখে হাসি নেই। সবাই দুশ্চিন্তায় রয়েছে। আবার অনেক জেলে ও মাঝি অবস্থান করছে দোকানপাটে। সেখানেও ধার-দেনা নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। তবে বেশি ভাগ জেলেদের দেখা গেছে ট্রলারের ওপর। ট্রলারে বরফ, খাদ্য সামগ্রী কিংবা ড্রাম মজুদ করছে। অনেকেই ট্রলারের মধ্যে বেকার সময় পার করছেন।
বাঁকখালী নদীর চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় নোঙর করা এফবি নিশানের জেলে রশীদ আহমদ বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। কিন্তু সাগরে যেতে পারছি না। দিনকাল খুবই কষ্টে যাচ্ছে। কাকে বলল কষ্টের কথা, সবাই তো কষ্টে রয়েছে।
এফবি লিবানের মাঝি জসিম উদ্দিন বলেন, “২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় মাত্র ৮ কেজি চাল পেয়েছি। ৮ কেজি চাল দিয়ে কত দিন চলতে পারে। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে, কিন্তু সাগরে ইলিশ শিকারে যেতে পারছি না আবহাওয়া খারাপ। খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি।”
সোমবার (২৭ অক্টোবর) আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি-৭-এ বলা হয়, দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সোমবার সন্ধ্যা ০৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩২৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৭৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০৫ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি ২৮ অক্টোবর ২০২৫ সন্ধ্যা/রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়, কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘন্টায় ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০২ (দুই) নম্বর (পুন:) ০২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়াও উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার থেকে ১২৭৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। সিগনাল আগের মতই ২ নং দূরবর্তী হুশিয়ারী সংকেত বহাল আছে। এটি আরো শক্তি অর্জন করে প্রবল ঘূর্ণিঝড় এ পরিনত হতে পারে। এটি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।”
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। জেলার টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সদর, পেকুয়া, চকরিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রায় কয়েক লাখ জেলে সাগরে নামার প্রস্তুতি নিয়েছিল। জেলায় ছোট-বড় মিলে পাঁচ হাজারের বেশি ট্রলার রয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোন্থায় সাগর উত্তাল, তাই কেউই সাগরে নামতে পারছেন না।”
এদিকে গত ছয় মাসে সাগরে তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। আগস্টে ছয়বার, সেপ্টেম্বরে তিনবার নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা, নিম্নচাপ আর ঘূর্ণিঝড়-সব মিলিয়ে কক্সবাজার উপকূলে এখন শুধুই অনিশ্চয়তা ও হাহাকার।
কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার জেলে আব্দুল কাদের বলেন, “নিষেধাজ্ঞার সময় ঘরে বসেছিলাম। দোকান থেকে বাকিতে চাল-ডাল কিনে সংসার চলেছে। বলা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা শেষেই সাগরে গিয়ে ইলিশ ধরব, তখন বাকি পরিশোধ করব। কিন্তু এখন নাকি ঘূর্ণিঝড় আসবে, সাগরও উত্তাল। তাই মাছ শিকারে সাগরে যেতে পারছি না। ২দিন ধরে ৬নম্বর ঘাটে বসে আসি। কী করব বুঝতে পারছি না।”
আরেক জেলে তাওহিদ আলম বলেন, জেলে পেশায় আছি ১৫ বছর। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি চাল সহায়তা পাননি। ২২ দিন কোনো আয় ছিল না। এখন আবার ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগরে যেতে পারছি না।
এফবি নাহিদা ট্রলারের মাঝি ইউসুফ মিয়া বলেন, ইলিশ ধরতে হলে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গভীর সাগরে যেতে হয়। এক ট্রিপে খরচ পড়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা। দুর্যোগে ট্রলার ফেরত এলে খরচের অর্ধেকটাই জেলেদের গুনতে হয়।
জেলে কবির, হুমায়ুন ও সব্বির বলেন, গত ছয় মাসে সাগরে তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি, অন্য সামুদ্রিক মাছও কমেছে। জেলেদের জীবনে এখন অভাব ও হাহাকার চলছে। অনেকে এক বেলা খাবার জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছেন। ট্রলারের মালিকেরা লোকসানে পড়ে জেলেদের অগ্রিম টাকা দিতেও অনিচ্ছা দেখাচ্ছেন।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “কক্সবাজারের জেলেদের বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না। গত ছয় মাসে সাগরে তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। আগস্টে ছয়বার ও সেপ্টেম্বরে তিনবার নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এখন ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার ঘূর্ণিঝড়। এসব কারণে জেলে ও ট্রলার মালিকেরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত নৌযান রয়েছে ৬ হাজারের বেশি আর লাখেরও বেশি জেলে থাকলেও নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৪ জন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫