বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন

এবার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুশ করতে নির্যাতন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি

রূপান্তর ডেস্ক
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫, ১১:২৯ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মহলে চলছে জোর আলোচনা। তবে এই আলোচনায় একদিকে রোহিঙ্গাদের ভেতর যেমন আছে আশাবাদী হওয়ার দৃশ্য, অন্যদিকে কাজ করছে শংকা আর অজানা ভয়ও।

নিজের দেশ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর এখনও তাদের তাড়া করে ফিরছে সেই জুলুম, নির্যাতন, খুন ও হত্যার দৃশ্য। প্রথমে মিয়ানমার জান্তা সরকার, এরপর আরাকান আর্মি। এ যেন কারও হাতে নিস্তার নেই। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার প্রশ্ন, নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে আর কতোকাল এমন নির্যাতন আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে তাদের। কবে ফিরবেন তারা নিজের আবাস ভূমিতে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সাথে চলমান সংঘাতে তীব্র খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট দেখা দিয়েছে। সীমান্ত অতিক্রম করে তাই বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন-আর আর আর সি’র তথ্যমতে, গত দেড় বছরে বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ১ লাখ ১৮ হাজার ৩১৬ জন রোহিঙ্গা।

ক্ষোভ প্রকাশ টেকনাফের ২৬ নং শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমার জান্তা সরকারের পর আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়িন ও নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘ, চীন, ভারতসহ বিশ্বের একাধিক প্রভাবশালী দেশ এসব দৃশ্য দেখার পরও নিজেদের স্বার্থের জন্য নিশ্চুপ রয়েছেন।

এই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শরণার্থী সৈয়দুল আমিন। তিনি বলেন, আমি যে গ্রামে থাকতাম, সেটি মিয়ানমারের বড় গজবিল এলাকায়। সেখানে প্রচুর নির্যাতন সয়েছি। শেষমেষ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাংলাদেশে চলে এসেছি। ৮ বছর ধরে এখানে আছি। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে শংকিত। আমরা কি সারাজীবন এখানেই থেকে যাবো?

তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূস সাহেব আমাদের আগামির ঈদের নামাজ মিয়ানমারে পড়তে পারবো বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনো আমরা শংকায় আছি। সেখানে গিয়ে আমাদের উপর আবারও নির্যাতন শুরু হবে না তো?

আরাকান আর্মিকে এখনও পুরোপুরি মিয়ানমার দখলে নিতে পারেননি। তাদের হাতেও আমাদের ভাই বোনরা নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসছে। বিশ্বকে বলবো দয়া করে আমাদের দিকে তাকান। আমাদের বাঁচান-উল্লেখ করেন সৈয়দুল আমিন।

আরেক বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে তিনি বলেন, মিয়ানমারের নির্যাতনের কথা বলতে গেলে আমার চোখে জল চলে আসে। আমাদের চোখের সামনে মা-বোনদের নির্যাতন জুলুম এবং ধর্ষণ করেছে সেখানকার সরকার বাহিনী। এসব দেখার পর বহুদিন কেঁদেছি। এগুলো সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে আমরা বাংলাদেশে চলে এসেছি। এখন আমাদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে কথা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পর আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। আমরা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে ফিরে যেতে চাই। আমাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ চাই। আরাকান আর্মির প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা নেই। তারা ক্রমশ বর্বর হয়ে উঠেছে। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সবকিছুই করছে ওরা।

রোহিঙ্গা শরণার্থী আজারা খাতুন বলেন, আমি আরাকান আর্মির নির্যাতনের কথা বলবো। তারা আমাদের সামনে অনেক মেয়েদের জুলুম নির্যাতন করেছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। এগুলো কেবলই দুঃসহ স্মৃতি। আমরা আরাকানে ফিরতে চাই। শুনেছি সেখানে এখন আরাকান আর্মি অস্ত্র তাক করে আছে। নিজের দেশে ফিরতে গিয়ে বন্দুকের নল হজম করতে হবে-এর চেয়ে বড় কষ্ট আর নেই। আমরা আরাকান আর্মিদের ভয় পাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশে থাকতে চাই না। বিশ্ব কি আমাদের কথা কখনোই ভাববে না।

রোহিঙ্গা নেতাদের অভিমত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়তা পৌঁছাতে ‘মানবিক করিডর’ গড়ার যে আলোচনা চলছে, তাতে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তেমন আগ্রহ কিংবা সাড়া নেই।

করিডরের আগে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল বা সেফজোন গড়তে হবে। অথবা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সুরাহা না করে এই ধরণের সিদ্ধান্ত এখনি নেওয়া ঠিক হবে কি না তা নিয়েও বিবেচনা করার সময় এসেছে বাংলাদেশের।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, রাখাইনে ১৭টি শহর রয়েছে। যার মধ্যে ১৪টি এখন আরাকান আর্মির দখলে। তাদের হাতে রয়েছে দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আর রাখাইনে বাকি শহরগুলোতে জান্তা বাহিনীর হাতে রয়েছে আরও ২ লাখ রোহিঙ্গা। তবে জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে তাড়িতে দিতে এখন দায়িত্ব দিয়েছে আরাকান আর্মির হাতে। জান্তা বাহিনী যেভাবে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে তাড়িয়ে দিয়েছে সেই একই রকমভাবে নির্যাতন করছে যাতে বাকি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বা বিদেশে পালিয়ে যায়। তারা মূলত রাখাইনকে রোহিঙ্গাশূন্য ও মুসলিম শূন্য বানাতে চাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫