সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫০ অপরাহ্ন

অনিশ্চিত সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:০৯ অপরাহ্ন

নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু শনিবার ও রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাট
রবিবার সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
জাহাজমালিকদের অনীহা
দুই দিন ধরে জাহাজ চলাচল বন্ধের কারণ জানতে চাইলে সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন আসা-যাওয়ায় এক জাহাজে জ্বালানি, কর্মচারীদের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু টিকিট বিক্রি থেকে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ দেড়-দুই লাখ টাকা। দিনে সাত থেকে আট লাখ টাকা লোকসান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই পুরো নভেম্বর মাস জাহাজ চালানো হবে না। তবে ইনানী বা টেকনাফ থেকে চালানোর সুযোগ দিলে কাল থেকেই জাহাজ চলতে পারবে। সেই প্রস্তুতি আমাদের আছে।’
হোসাইন ইসলাম বাহাদুর আরও বলেন, অনুমোদন পাওয়া এমভি কর্ণফুলী ও বার আউলিয়া বর্তমানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নোঙর করা আছে। সেখান থেকে কক্সবাজার আসতে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে।

হতাশ পর্যটকেরা
ঢাকার কমলাপুর এলাকার চার যুবক গতকাল সকালে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারে আসেন। কিন্তু শহরের কোথাও জাহাজের টিকিট পাননি। তাঁদের একজন, সাজ্জাদুল ইসলাম (৩৪), বলেন, জাহাজ না থাকায় কোথাও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য কোনো নৌযানেও যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকার বা জাহাজমালিকদের পক্ষ থেকে আগে থেকে জানানো হলে এই বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না।

রবিবার দুপুরে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় ঢাকার সদরঘাটের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুনের (৪৮) সঙ্গে। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে। তিনি বলেন, ‘গত বছর কর্ণফুলী জাহাজে সেন্ট মার্টিন গিয়েছিলাম। সকাল সাতটায় কক্সবাজার থেকে ছাড়ে, বেলা দুইটার দিকে দ্বীপে পৌঁছায়, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আবার ফিরে আসে। হাতে সময় থাকে মাত্র দেড় ঘণ্টা—তাতে ভ্রমণ, খাওয়াদাওয়া ও কেনাকাটা কিছুই করা যায় না। রাতযাপনের সুযোগ না থাকলে কক্সবাজার থেকে পর্যটকেরা আর আগ্রহী হবে না।’

ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা
সেন্ট মার্টিন হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী বলেন, পর্যটক বরণে প্রস্তুতি ছিল। কোটি টাকা খরচ করে হোটেল-রিসোর্ট সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু রাতযাপনের সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। পুরো নভেম্বর যদি পর্যটক না আসেন, তাহলে দ্বীপের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভয়াবহ ক্ষতি হবে। পরিবেশ রক্ষা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু তাতে স্থানীয় লোকজনের জীবিকা ও বিনিয়োগকারীদের টিকিয়ে রাখার দিকটাও দেখতে হবে।

সেন্ট মার্টিন দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি মৌলভি নুর মোহাম্মদ বলেন, তিন বছর আগেও টেকনাফ থেকে ৯-১১টি জাহাজে প্রতিদিন পাঁচ-ছয় হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করত। কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত, আরাকান আর্মির দখল, নাফ নদীতে গুলিবর্ষণ ও অপহরণের ঘটনার পর টেকনাফ রুট বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য গত বছর থেকে কক্সবাজার রুটে জাহাজ চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫