সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য দেশের সাগর ও নদীগুলোতে মাছ শিকারের ক্ষেত্রে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
শনিবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে যাচ্ছে। আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাগর ও নদীগুলোতে জারি থাকবে এ নিষেধাজ্ঞা।
নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষে ইতোমধ্যে পোস্টারিং, ব্যানার, সচেতনতামূলক সভা ও মাইকিংয়ের কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন অনেক জেলের নিয়ম ভাঙার প্রবণতা থাকে, সেক্ষেত্রে আমরা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সভা করেছি। তাঁরা সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, টেকনাফ উপজেলায় নিবন্ধনধারী জেলেদের সংখ্যা ১০ হাজার ৬৮৩ জন। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের জন্য বরাদ্দ সরকার প্রদত্ত ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছিল। এইবারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় নিবন্ধিত জেলেদের মধ্য থেকে গরীব ও সুবিধা বঞ্চিত ৪০ শতাংশ জেলেদেরকে ২৫-৩০ কেজি চাল প্রদান করা হবে।
জেলেরা জানায়, সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়াতে জেলেরা পড়বেন অস্তিত্ব সংকটে। একদিকে বছরে দুই বার নিষেধাজ্ঞা। অপরদিকে এই বছর ভরা মৌসুমেও সাগরে মাছের আকাল পড়েছে। ঋণের বোঁঝা এবং ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে জেলেরা রয়েছে চরম বিপাকে। তাছাড়া সরকার এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ৪০ শতাংশ জেলেদের জন্য চাল বরাদ্দ করেছে বলে শুনেছি – যা প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।
সাবরাং মুন্ডার ডেইল ঘাটের জেলে আব্দুর রহমান জানান, এনজিওর ঋণ নিয়ে মানসিক দুশ্চিন্তায় চোখে ঘুম আসে না। এইদিকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় মাত্র ২৫ কেজি চাল দিয়ে কীভাবে ছেলে মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাব- আল্লাহ ভালো জানেন।
সাবরাং বাহারছড়া ঘাটের বোটের মাঝি আব্দুল আমিন জানান, মাছ শিকার করে সংসার চালাতে এমনিতেই বেকায়দায় পড়ে যায়। মাঝেমাঝে ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হয়। আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় এই ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা বোঁঝা আরও বেড়ে যাবে।
অনেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, এখনো পর্যন্ত অনেক প্রকৃত জেলে নিবন্ধনের সুযোগ পায়নি। নামেমাত্র অনেক জেলে নিবন্ধনের সুযোগ পেয়ে সরকার প্রদত্ত বরাদ্দকৃত চাল গ্রহণ করে থাকে। পাশাপাশি অনেক জেলে পেশা পরিবর্তনের পরেও এ সুবিধা গ্রহণ করে যাচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, এধরণের হওয়ার সুযোগ নেই৷ তারপরও কোন প্রকৃত জেলে নিবন্ধনের আওতায় না আসলে তারা যেন উপজেলা মৎস্য অফিসে এসে যোগাযোগ করে। তাছাড়া প্রতিবছর এ তালিকার হালনাগাদ করা হয়। পেশা পরিবর্তন করা জেলেদের ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ট্রলার মালিক মো. হাসান বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতি বছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরলেও কোনো ভূমিকা দেখা যায়না প্রশাসনের। অন্যথায় আমাদের জালে চাহিদানুযায়ী মাছ ধরা পড়ত। তাই সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন তিনি।
টেকনাফের আড়তদার নুরুল মোস্তফা বলেন, সরকার সমুদ্রে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও জেলেদের স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তবে সেটা যদি মৎস্য পেশাকে নিশ্চিহ্ন করে তাহলে অতি সম্প্রতি এই পেশায় সংকট দেখা দিবে। তাই নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা জরুরী।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, জেলেদের দাবি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করা হচ্ছে। এছাড়া জেলেদের ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও চলছে।
সূর্যোদয় :- ৫:১০ | সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯ |
নাম | সময় |
ফজর | ৪:১৫ |
যোহর | ১২:১০ |
আছর | ৪:৫০ |
মাগরিব | ৬:৪৫ |
এশা | ৮:১৫ |