শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩০ অপরাহ্ন

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিকট খোলা চিঠি

রূপান্তর ডেস্ক / ১১১ বার পড়া হয়েছে
আপডেট সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ৩:২৫ অপরাহ্ন

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিকট খোলা চিঠি

বিষয়: ত্যাগীদের মূল্যায়ন, তৃণমূলে জাতীয়তাবাদী শক্তির পুনর্জাগরণে পদক্ষেপ।

মাননীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয়,

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহ মাতুল্লাহ। আপনি ও আপনার পরিবারের সুস্থতার জন্য আল্লাহর নিকট সব সময় দোয়া করি।

আমি মুরাদ হোসেন চৌধুরী। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির তৃণমূলের একজন নিবেদিতকর্মী। দলের দুর্দিনে খেয়ে না খেয়ে দলের যেকোন কর্মসূচিতে রাজপথে সময় অতিবাহিত করেছিলাম।
বুকের ভেতর জমে থাকা দুঃখ-বেদনা, আশা-নিরাশা ও ভালোবাসার কথাগুলো আপনাকে জানাতে এই খোলা চিঠিখানা লিখছি। জানি না আমার কথাগুলো আপনার বরাবর পৌঁছাবে কিনা; পৌঁছালেও আপনার কর্মব্যস্ততার মাঝে পড়বার সুযোগ হবে কিনা- তাও নিশ্চিত নয়। তারপরও দলের প্রতি আমার আবেগ, আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম- একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মীর প্রাণের আর্তি।

পারিবারিক পরিচয় ও রাজনীতির বংশগতি:

আমার পিতা মাস্টার জাকের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বিএনপির একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। তিনি ১৯৭৮ সালে যখন কক্সবাজার জেলা বিএনপির ভিত্তি স্থাপন করা হয়, তখন সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বহুবার নিগৃহীত হয়েছেন।
আমি তাঁর একমাত্র সন্তান হিসেবে সেই রক্ত আর চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠেছি। আমার বাবার কাছে রাজনীতি মানেই ছিলো দেশপ্রেম, জনগণের সেবা এবং নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমি সেই আদর্শ বুকে নিয়ে আজ পর্যন্ত চলেছি।

নিজের রাজনীতির সংগ্রামী যাত্রা:

২০০৩ সালে হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি, ২০০৬ সালে হ্নীলা ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক, ২০১২ সালে টেকনাফ উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক, ২০২২ সালে হ্নীলা ইউনিয়ন কৃষকদলের আহবায়ক ও ২০২৫ সালে কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিপুল ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়।

বিশেষ করে, গত ১৭ বছরে আমার রাজনৈতিক জীবনের পথচলা কোনোভাবেই সহজ ছিল না। আমি একে একে ৩৯টি রাজনৈতিক মামলার আসামী হই—যার বেশিরভাগ ছিলো ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। আমি ১২ বার জেল কেটেছি। বন্দীজীবনের প্রতিটি দিনই আমি বিএনপির পতাকা বুকে ধারণ করেছি, কোনদিন মুখ ফিরিয়ে নেইনি।

সবচেয়ে হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা হলো ২০১৯ সালে ৩ সেপ্টেম্বরে ৫৩ দিন গুম অবস্থায় কাটানো। সেই সময় আমার পরিবারের কেউ জানতো না আমি বেঁচে আছি না মারা গেছি! চোখ বাঁধা, হাত বাঁধা অবস্থায় নানান নির্যাতন ভোগ করেছিলাম। এরপরেও আমি ভেঙে পড়িনি। কারণ আমি বিশ্বাস করি—আপনি, বিএনপি এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ আমাকে পথ দেখিয়েছে।

তৃণমূলের বাস্তবতা ও মূল্যায়নের অভাব:

মাননীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান,
আপনি যখন লন্ডন থেকে দলের জন্য দিন-রাত কাজ করছেন, আমরা তখন মাঠে থেকে নিজের জীবনবাজি রেখে দলের পতাকা ধরে রাখছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের মতো তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী যাঁরা জীবনের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন, নিঃস্ব হয়েছেন— আজ তাঁদের কারও নাম উচ্চারিত হয় না।

বিপরীতে যারা দলের দুর্দিনে পতিত সরকারের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নানাভাবে আঁতাত করেছেন, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, দলের কোন খোঁজ-খবর রাখেনি- তারা-ই আজ দলের হর্তা-কর্তা, বড় বড় পদের মালিক। অথচ যারা এক যুগ ধরে নিপীড়ন সহ্য করেছে, তাঁদের মূল্যায়নের বাণী দলের সিনিয়রদের মুখে আমরা শুনি না।

আমার মতো আরও অসংখ্য ত্যাগী নেতা আছেন যাঁদের কোন স্বীকৃতি নেই। আমরা চাই না পদ, আমরা চাই স্বীকৃতি, ভালোবাসা ও সম্মান।

আহ্বান: নতুন নেতৃত্বে তৃণমূলের শক্তি সংযুক্ত হোক-

আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি- ত্যাগ-ই বিএনপির আসল শক্তি। ত্যাগীরা মূল্যায়ন হলেই তবে বিএনপির শেকড় হবে আরও গভীর, আরও শক্তিশালী।

প্রস্তাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি :

আমার দীর্ঘদিনের পথচলায় কিছু প্রস্তাব আপনার সমীপে উপস্থাপন করছি-

১. ত্যাগীদেরর তালিকা তৈরি:
যারা মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, গুম হয়েছেন, আহত হয়েছেন- উপজেলা ভিত্তিক তাদের একটি ডাটাবেইজ তৈরি করা হোক।

২. তৃণমূল প্রতিনিধি কাউন্সিল: প্রতিটি উপজেলায় একটি তৃণমূল প্রতিনিধি কাউন্সিল গঠন করা হোক যাতে দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হয়।

৩. আর্থিক সহায়তা ফান্ড: রাজপথে সংগ্রাম ও জুলুম নির্যাতনের কারণে যারা অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন- তাদের জন্য একটি বিশেষ সহায়তা ফান্ড গঠন করা হোক।

৪. মিডিয়ায় তুলে ধরা হোক সংগ্রামীদের গল্প: প্রজন্ম জানুক এই মুরাদ হোসেন চৌধুরীসহ আপনার দলের হাজারো নিবেদিতপ্রাণ মুরাদের কথা।

৫. শেষ আবেদন: আপনি আমাদের নেতা, আমাদের অভিভাবক, আমাদের মাথার মুকুট। ব্যক্তিগত লাভের আশায় নয়, আমার মতো হাজারো নিঃস্ব ও ত্যাগী সৈনিকের পক্ষে আমার লিখা। আমার আবদার- আপন চিনবেন, মনে রাখবেন এবং খোঁজ-খবর নিবেন।

হে প্রিয় অভিভাবক,

বিএনপি আমার কাছে একটি দল নয়, আমার আত্মপরিচয়। আর আপনি-ই সেই স্বপ্নের অভিভাবক—যাঁর দিকে তাকিয়ে প্রাণচঞ্চার হয়।

আপনার একটি আহ্বানে ফের জেগে ওঠতে চাই জাতীয়তাবাদী শক্তিতে।

ভুল-ক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে নিবেন।

আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধাসহ-
মুরাদ হোসেন চৌধুরী,
সভাপতি, হ্নীলা ইউনিয়ন কৃষকদল, টেকনাফ, কক্সবাজার।
মোবাইল: ০১৮২৪-০১৭৫৯৬
তারিখ: ১৬ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫