রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
Logo হ্নীলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন আলোচিত আজম সরকার Logo বাহারছড়া শীলখালি থেকে অপহরণ চক্রের দুই সদস্য আটক Logo উখিয়া-টেকনাফে জমজমাট ‘সুপারি বাজার’ Logo তারেক রহমান সরকার প্রধান হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হবে: সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী Logo উখিয়া সীমান্তে দেড় লাখ ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা আটক Logo মিয়ানমারে অবৈধভাবে পাচারকালে খাদ্য ও নির্মাণ সামগ্রীসহ আটক ২২ Logo নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে ইয়াবা ও ইয়াবা বিক্রির টাকাসহ নুর ইসলাম আটক Logo যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত Logo কক্সবাজারে নাশকতা রোধে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযান চলছে Logo টেকনাফে প্রথম ধাপে ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ

‘জিও ব্যাগ ব্যর্থ, উপকূল রক্ষায় হুমকি’

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

সাগরের ভয়াল আগ্রাসনে ভাঙ্গন তীব্র হয়েছে কক্সবাজার উপকূলে। উচ্চ জোয়ার আর উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে ভেঙে পড়ছে ঝাউবিথী। তছনছ রাস্তা-ঘাট, ঝাউগাছ উপড়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈদ্যুতিক তার। জিও ব্যাগও ঠেকাতে পারছে না। এমনকি হুমকি মুখে পড়েছে সরকারি ও বেসরকারি নানা স্থাপনা।
ষাট বছর বয়সী নুরুল আলম; সাগরে মাছ শিকার বা পোনা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। কিন্তু উচ্চ জোয়ার আর উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের কারণে নামতে পারছেন না সাগরে। তাই সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে ছাতা হাতে হেঁটে হেঁটে দেখছেন সাগরের ভয়াবহ আগ্রাসন। তিনি বলছিলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ষায় ভয়াবহ ভাঙনের কথা।

নুরুল আলম বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সাগরের আগ্রাসন বাড়ছে। যদি সতর্ক সংকেত আর বাতাস এক সঙ্গে হয় তখন সাগরপাড়ে ভাঙন তীব্র হচ্ছে আর বিলীন হচ্ছে একের পর এক ঝাউগাছ। সাগরের পাড় ছিল অনেক দূরে। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে জোয়ারের পানি বেড়ে সাগরপাড় ভেঙ্গে ভেঙ্গে শহরের কাছাকাছি চলে আসছে। জিও ব্যাগ দিয়েও কোন কাজে আসছে না। প্রতিবছরই ভয়াবহতা বাড়ছে।
সরেজনিম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের শৈবাল পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়; জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে পর্যটন কর্পোরেশনের একটি স্থাপনা। উপড়ে পড়েছে নারিকেল গাছ ও ঝাউগাছ। যেকোন মুহুর্তে তলিয়ে যাবে পর্যটন কর্পোরেশনের শৈবাল বিচ ক্যাফেটিও।
এছাড়াও জোয়ারের তাণ্ডবে কলাতলী পয়েন্টে স্থাপিত ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি তথ্যকেন্দ্র ভেঙে যায়। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে স্থাপিত ট্যুরিস্ট পুলিশের আরেকটি তথ্যকেন্দ্রও জোয়ারের ধাক্কায় হেলে পড়ে। এটিও যে কোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে।
প্রতিবছর বর্ষামৌসুম এলেই যেন আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে এই ভাঙন। তবে এবার ভাঙনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব রেকর্ড। স্থানীয়রা বলছেন, উচ্চ জোয়ার আর উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে জিও ব্যাগও ঠেকাতে পারছে না ভাঙন। উপড়ে পড়ছে একের পর এক ঝাউগাছ।
সাগরপাড়ের কিটকট ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে লাবণী পয়েন্টে ছাতার নিচে পর্যটকদের বসিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালান। কিন্তু সাগরের ভয়াল আগ্রাসনে তিনি এখন দুশ্চিন্তায়। তীব্র ভাঙনে বন্ধ হতে যাচ্ছে তার আয়ের উৎস।
একের পর এক ভাঙছে সৈকতের বালিয়াড়ি, ঝুঁকির মুখে নানা স্থাপনা। তাই দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না সৈকতপাড়ের ব্যবসায়ীদের।
এদিকে গত দুদিনে জোয়ারের পানিতে সৈকতের ডায়াবেটিস থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত উপড়ে পড়েছে প্রায় শতাধিক ঝাউগাছ। আর ১০টি বেশি ঝাউগাছ উপড়ে পড়ে ছিঁড়ে গেছে বৈদ্যুতিক তার। তার ঝাউগাছ কেটে বৈদ্যুতিক তারগুলো সরিয়ে নিতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বাগানমালি মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, জোয়ারের পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ঝাউবাগান। প্রচুর পরিমাণে ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। এই উপড়ে পড়া ঝাউগাছগুলো কেটে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর বৈদ্যুতিক তারও ঝাউগাছের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন যা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এদিকে সাগরের ভয়াবহ আগ্রাসনে হুমকির মুখে সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা। সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের বেশ কিছু অংশ এরই মধ্যে জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত। নষ্ট হচ্ছে সৈকতপাড়ের সৌন্দর্যও।
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার প্রকল্প কর্মকর্তা মো. ইতিয়াজ আহমেদ বলেন, সাগরের উচ্চ জোয়ারের পানির আঘাতে সৈকতের লাবনী থেকে মাদ্রাসা পয়েন্ট পর্যন্ত গত দু’দিনে ৩ ভাগের ১ ভাগ ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। তছনছ হয়েছে সৈকতপাড়ের রাস্তা। জিও ব্যাগও রক্ষা করতে পারছে না সাগরের আগ্রাসন। এরই মধ্যে শৈবাল পয়েন্টে পর্যটন কর্পোরেশনের শৈবাল বিচ ক্যাফেতে আঘাত করেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে পানির ট্যাংকও। কলাতলী পয়েন্টে জোয়ারের পানির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্ক, আঘাত করেছে মার্কেটেও। সুগন্ধা পয়েন্টেও ট্যুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে কিন্তু প্রতি বর্ষামৌসুমে ক্ষতির মাত্রার বাড়ছে।
মো. ইতিয়াজ আহমেদ বলেন, উচ্চ জোয়ার আর উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে হুমকি মুখে পড়েছে সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবনী ও শৈবাল পয়েন্টের সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা। যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয়, জেলা প্রশাসনের তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র, ছাতা মার্কেট, উন্মুক্ত মঞ্চ, বেশকিছু হোটেল-রেস্তোরাও। যেভাবে প্রতিবছর সাগরের ঢেউয়ে উচ্চতা বেড়ে উপকূলে আঘাত করছে তাতে মনে হচ্ছে ঝাউবাগান হয় তো আগামী বছর আর থাকবে না। তার সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা পানিতে তলিয়ে যাবে। তাই বর্ষা মৌসুম শেষে অবশ্যই প্রকৃতিকে রক্ষায় যে কোন ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
বনবিভাগের তথ্য সূত্র বলছে, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১৯৬১-৬২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে প্রথমে সৃজন করা হয় ঝাউগাছ। ১৯৭৪ সালে ঝাউ বাগানের প্রসার ঘটানো হয়। তখন থেকেই এ ঝাউবাগান সমুদ্র পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করে আসছে। তবে ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ে অর্ধেকের বেশি বাগান বিলীন হয়।
সূত্র আরও জানায়, ১৯৯১-৯২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার চারা রোপণ করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ১১৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে রোপণ করা হয় ৩ লক্ষাধিক ঝাউচারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে ৪০ হেক্টরে লক্ষাধিক চারা, ১৯৯৮-৯৯ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা, ২০০২-০৩ সালে ৮ হেক্টরে ২০ হাজার চারা, ২০০৩-০৪ সালে ৮৭ হেক্টরে ২ লাখ ১৭ হাজার চারা ও ২০১০-১১ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা রোপণ করা হয়। প্রতি হেক্টরে আড়াই হাজার করে প্রায় ৩০০ হেক্টরে সাড়ে ৭ লক্ষাধিক ঝাউগাছ সৃজন করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জোয়ারের ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙতে থাকে সৈকতের বালিয়াড়ি। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে গোড়া থেকে বালি সরে যায়। এতে বিলীন হতে থাকে নয়নাভিরাম ঝাউবাগান।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাউগাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় বিলীন হতে থাকে ঝাউবাগান। তবে ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৮৫ হেক্টর জমিতে ঝাউগাছ লাগানো হয়েছে। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূল রক্ষায় সাগর তীরে আধুনিক পদ্ধতিতে কোনো বাঁধ নির্মাণ করা যেত তাহলে উপকূলবাসী রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাউগাছ রক্ষা পেত।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এই এলাকায় প্রতিবছর জিও ব্যাগ বসিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, সাগরের জোয়ারের পানির উচ্চতা অনেক বেশি। সাগরও উত্তাল। এ অবস্থায় জোয়ারের পানির আঘাতে গাছ উপড়ে পড়া, বালিয়াড়ির পাড় ভাঙন কিংবা অনেক কিছুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এটা কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে হচ্ছে। এটা বাধাগ্রস্ত করার কোন সুযোগ নেই। তারপরও যেসব স্থানে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন সেখানে জিও ব্যাগ দেয়া আছে। আর বর্ষাকালটা চলে গেলে যেসব স্থানে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন আছে সেসব স্থানে পরিবেশ ঠিক রেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গেলো কয়েক বছর ধরে সৈকতের কলাতলী থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙ্গন তীব্র হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো সংবাদ পড়ুন...
  • নামাজের সময়সূচি
  • রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • সূর্যোদয় :- ৫:১০ সূর্যাস্ত :- ৬:৪৯
    নাম সময়
    ফজর ৪:১৫
    যোহর ১২:১০
    আছর ৪:৫০
    মাগরিব ৬:৪৫
    এশা ৮:১৫